পাপুল চক্রের প্রমোদতরী, গাড়ি, গহনা সহ নানান অপকর্মের সন্ধান

বিশেষ প্রতিনিধ- কোথায় নেই বাংলাদেশি এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের সম্পদ ? এতদিন তার বাংলাদেশ আর কুয়েতি অপকর্মের খবর পাওয়া যাচ্ছিল। এবার আরব সাগর বা সিন্ধু সাগর তীরে পাপুলচক্রের বিস্তৃত নেটওয়ার্কের চাঞ্চল্যকর সব ঘটনা উন্মোচিত হচ্ছে। যাতে কুয়েতি তদন্তকারী সংস্থার সদস্যদের চোখ ছানাবড়া হওয়ার দশা।

মানবপাচার, মানি লন্ডারিং আর ভিসা জালিয়াতির দায়ে আটক বাংলাদেশি সংসদ সদস্য কাজি পাপুলচক্রের পরিধি ছিল করাচি থেকে বাগদাদ অবধি। কুয়েতের আরবি দৈনিক আল কাবাস এ নিয়ে অর্ধপৃষ্ঠা জুড়ে লিড রিপোর্ট ছেপেছে।
যার সূচনাতেই বলা হয়েছে, দিন যত যাচ্ছে পাপুল এবং তার সহযোগী মানবপাচারকারী চক্রের অপকর্মের খতিয়ান দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। ওই চক্রের অনৈতিক সহায়তায় ৫ হাজার পাকিস্তানি নাগরিক যার বেশিরভাগই স্পাউস ভিসায় কুয়েতে প্রবেশ করেছে। অনেকে বৈধতাও পেয়েছে।

তারা চক্রকে মোটা অঙ্কের অর্থ দিয়েছে ঘুষ হিসাবে। তাদের অনৈতিক লেনদেনের আলামত এখন তদন্ত সংস্থার হাতে। আল কাবাসের সিকিউরিটি এডিটরের লেখা রিপোর্টটিতে স্পষ্ট করেই ওই লেনদেনে বাংলাদেশি এমপি পাপুলের সম্পৃক্ততার কথা উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, বাংলাদেশি এমপির সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্যানুন্ধানে এটি সামনে আসে।
ফ্যামিলি বা ভিজিট ভিসায় ওই পাকিস্তানিরা কুয়েতে ঢুকেছে যখন পাকিস্তান, ইরানসহ কিছু দেশের নাগরিকদের কুয়েতে প্রবেশে কড়াকড়ি বা নিষেধাজ্ঞা ছিল। ঘুষের বিনিময়ে বিপুলসংখ্যক পাকিস্তানির প্রবেশ এবং বৈধতা আজ প্রশ্নবিদ্ধ উল্লেখ করে আল-কাবাসের রিপোর্টে বলা হয়, কীভাবে তারা বৈধতা পেলেন সেটি খুঁজতে গিয়ে অবাক হয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তারা।
এ কাজে মিনিস্ট্রি অব ইন্টেরিয়রের বহু কর্তা জড়িত। তারাও বিনিময় পেয়েছেন মোটা অঙ্কের। জালিয়াতিটা এতটাই সূক্ষ্মভাবে সম্পন্ন হয়েছে, যে তাদের এন্টি বা প্রবেশ সিলের তারিখ অদল-বদল করে দেয়া হয়েছে, যাতে ধরা না পড়ে। এ কাজে কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বহিষ্কৃত এসিস্ট্যান্ট আন্ডার-সেক্রেটারি মেজর জেনারেল শেখ মাজান আল জারাহকে মূল অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

পাপুলকাণ্ডে তিনি বর্তমানে জেলহাজতে রয়েছেন। চাকরিচ্যুতির পর তাকে আটক করা হয়। দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পাপুলের সঙ্গে তাকে জেলহাজতে পাঠিয়েছেন আদালত।
এদিকে কুয়েতের সংবাদমাধ্যমকে উদ্ধৃত করে প্রচারিত গাল্ফ নিউজ এক প্রতিবেদনে ইরানি মানবপাচারকারী চক্রের সঙ্গে বাংলাদেশি এমপি পাপুলের সম্পৃক্ততার বয়ান পাওয়া গেছে।
তাতে বলা হয়, কুয়েতের তদন্ত সংস্থা সমপ্রতি মানবপাচারে জড়িত একটি ইরানি নেটওয়ার্কের সন্ধান পায়, ওই চক্রের মাস্টারমাইন্ডকেও তারা কব্জায় নিতে সক্ষম হয়। চক্রটি ১০০০ ইরানি নাগরিককে কুয়েতে পাচার করেছে কাগজপত্র জালিয়াতি করে।
ইরানি চক্রটি মানবপাচার ও অর্থ পাচারের মামলায় হাই প্রোফাইল বিবাদী হিসাবে ধৃত বাংলাদেশের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ শহিদ ইসলাম পাপুলের সহযোগী। তারা যুগ্মভাবে মানবপাচার ও মানি লন্ডারিংয়ের অনেক প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করেছে।
কার্য উদ্ধারে তারা বিলাসবহুল গাড়ি, ঘড়ি, মূল্যবান গহনা ঘুষ দেয়া ছাড়াও প্রমোদতরী ব্যবহার করতো। নিষিদ্ধ বা গোপন কারবারে এসব উপকরণ ছিল অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। কুয়েতি তদন্ত সংস্থা পাচার চক্রের ব্যবহৃত বিলাসবহুল ও ক্লাসিক গাড়ি, অব্যবহৃত ব্যয়বহুল ঘড়ি এবং গহনা, ফরেন কারেন্সি (নগদ), প্রমোদতরী এবং মদ্যপানীয়ের বাক্সসহ বেশ কয়েকটি মূল্যবান উপকরণ (যা মানবপাচার কাজের টুলস) এরই মধ্যে উদ্ধার এবং জব্দ করেছে।
ওই রিপোর্টে কুয়েতের আমির শেখ সাবাহ আল আহমদ আল জাবের আল সাবাহকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, অসুস্থ হওয়ার আগে আমির কুয়েতে দেশি বিদেশি দুর্নীতিবাজদের আগ্রাসনের অপচেষ্টায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং এর বিহিত করতে দুর্নীতি দমন সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *