ডেঙ্গু ও করোনাভাইরাস একসঙ্গে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা যেন বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। এ বছর এখন পর্যন্ত সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ৩৩১ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ২৬৪ জন ঢাকার ও বাকি ৬৭ জন অন্যান্য জেলার। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের অভিমত, প্রাণঘাতী এই দুই রোগে একসঙ্গে আক্রান্ত পরিস্থিতি আরও মারাত্মক হবে। দেশে প্রথম বারের মত ডেঙ্গু ও করোনা এই দুই রোগে আক্রান্ত হয়ে আনিসুর রহমান নামের এক ব্যক্তি এখন গুরুতর অবস্থায় একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে আছেন।
স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ৩৩১ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ২৬৪ জন ঢাকার ও বাকি ৬৭ জন অন্যান্য জেলার। গত বছর ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্তের মধ্যে ৪৯ হাজার ৫৪৪ জন ঢাকার বাইরের ছিলেন। ডেঙ্গুতে মোট মারা গিয়েছিলেন ১৭৯ জন।
এদিকে এক দিনে রেকর্ড ১ হাজার ২০২ জনের মধ্যে নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ায় দেশে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২০ হাজার ৬৫ জন। গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ১৫ জন। এ নিয়ে দেশে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ালো ২৯৮ জনে। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম রোগীর খোঁজ মেলার পর গত সোয়া দুই মাসে আর কখনও এক দিনে এত নতুন রোগী শনাক্ত হয়নি। সারা দেশে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ২৭৯ জন। সব মিলয়ে এ পর্যন্ত মোট ৩ হাজার ৮৮২ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
অপরদিকে , দেশে প্রথম বারের মত ডেঙ্গু ও করোনা এই দুই রোগে আক্রান্ত হয়ে আনিসুর রহমান নামের এক ব্যক্তি একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে আছেন। গত কয়েকদিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন ৫৩ বছর বয়সী আনিসুর রহমান। তার কাশি, গায়ে ব্যথা ও শ্বাসকষ্টও ছিল। আনিসুর রহমানের মেয়ে একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। বাবার শারীরিক অসুস্থতা দেখে তার সন্দেহ হয়েছিল যে, তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, আমি বাবাকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাই। ডেঙ্গু ও করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। রিপোর্টে দেখা যায়, তার ডেঙ্গু ও করোনাভাইরাস দুটোই পজিটিভ। তিনি আরও বলেন, আমার বাবা এখন গুরুতর অবস্থায় একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে আছেন। আমরা তাকে মুগদা
জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা করছি।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ডেঙ্গু ও করোনাভাইরাস একসঙ্গে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা যেন বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। প্রাণঘাতী দুই রোগে একসঙ্গে আক্রান্ত হলে সুস্থ হয়ে ওঠা কঠিন হতে পারে।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, এটা দ্বিগুণ আঘাত। করোনাভাইরাস ও ডেঙ্গু দুটোই বেশ জটিল। গত বছর ডেঙ্গু নিয়ে আমাদের খারাপ অভিজ্ঞতা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, করোনাভাইরাসের সঙ্গে ডেঙ্গু যোগ হলে পরিস্থিতি আরও মারাত্মক হবে। উভয় রোগ মোকাবিলার জন্যই সর্তক থাকার আহ্বান জানান তিনি।
গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত শনাক্তের পর এখন পর্যন্ত ২৯৮ জন এ রোগে মারা গেছেন। গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ২০ হাজার ৬৫ জন।