সংবাদ শিরোনামঃ
দালাল বাজার ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান হিসেবে কাকে ভোট দিবেন? লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দালাল বাজার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৪নং ওয়ার্ডে মেম্বার পদপ্রার্থী কাজল খাঁনের গণজোয়ার লক্ষ্মীপুরের উপশহর দালাল বাজার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী পাঁচজন,কে হবেন চেয়ারম্যান ? বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ওমান সুর শাখার সহ-সাধারন সম্পাদক কামাল হোসেনের ঈদের শুভেচ্ছা, ঈদ মোবারক এমপি ও মন্ত্রী হতে নয় বরং মানুষের পাশে দাঁড়াতে আ.লীগ করি, সুজিত রায় নন্দী বাড়ছে ভুয়া সাংবাদিকদের দৌরাত্ম্য, নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী পদক্ষেপ চাই বাড়ছে ভুয়া সাংবাদিকদের দৌরাত্ম্য, নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী পদক্ষেপ চাই লক্ষ্মীপুরে বিনা তদবিরে পুলিশে চাকরি পেল ৪৪ নারী-পুরুষ দুস্থ মানবতার সেবায় এগিয়ে আসা “সমিতি ওমান ” কর্তৃক চট্টগ্রামে ইফতার সামগ্রী বিতরণ দলিল যার, জমি তার- নিশ্চিতে আইন পাস লক্ষ্মীপুরে প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে পবিত্র কুমার  লক্ষ্মীপুর সংরক্ষিত আসনের মহিলা সাংসদ আশ্রাফুন নেসা পারুল রায়পুরে খেজুর রস চুরির প্রতিবাদ করায় বৃদ্ধকে মারধরের অভিযোগ লক্ষ্মীপুরে আলোচিত রীয়া ধর্ষণের বিষয়ে আদালতে মামলা তিনশ’ বছরের ঐতিহাসিক ‘খোয়াসাগর দিঘি’র নাম পরিবর্তনের কোন সুযোগ নেই, জেলা প্রশাসক’
কুমুদিনী ট্রাস্টের ট্রাস্টি একজন দানবীর রণদা প্রসাদ এর স্মৃতি কথা

কুমুদিনী ট্রাস্টের ট্রাস্টি একজন দানবীর রণদা প্রসাদ এর স্মৃতি কথা

ভিবি নিউজ ডেস্কঃ

রণদা প্রসাদ সাহা এবং তাঁর পুত্রকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়।
রণদা প্রসাদ সাহা, একটি নাম তথা অসাধারণ এক বিস্ময়! তিনি জন্ম নিয়েছিলেন বাংলাদেশের এক হতদরিদ্র পরিবারে। জীবনের নানা ঘাত প্রতিঘাত পেরিয়ে নিজ কর্মগুণে যে বিশাল সম্পদের ভাণ্ডার গড়ে তুলেছিলেন তার পুরোটাই মানবতার কল্যাণে উৎসর্গ করে গেছেন। তিনি ১৮৯৬ সালের ১৫ই নভেম্বর ঢাকার সাভারের অদূরে শিমুলিয়ার কাছৈড় গ্রামের মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। বাবার নাম দেবেন্দ্রনাথ পোদ্দার, মা কুমুদিনী দেবী। তিনভাই এক বোনের মধ্যে রণদা প্রসাদ দ্বিতীয়। রণদা প্রসাদ সাহার পৈতৃক বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর উপজেলায়। মাত্র সাত বছর বয়সে রণদা প্রসাদ সাহার চোখের সামনে মায়ের মৃত্যু হয়। বিনা চিকিৎসায় আর অবহেলায় মারা যায় মা। এই মৃত্যুই মাত্র সাত বছরের একটি শিশুর জীবনের দর্শন বদলে দেয়। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেন হতদরিদ্র সাধারণ মানুষের জন্য, মানবতার জন্য জীবনে কিছু করতেই হবে। মায়ের মৃত্যুর পরে বাবা দেবেন্দ্রনাথ আত্মীয়-পরিজনের পরামর্শে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। পড়াশোনার জন্য রণদা প্রসাদ সাহাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় মামার বাড়ি। কিন্তু, গৎ বাঁধা জীবন তাঁর একদম ভালো লাগেনি। এ কারণে মাত্র ১৪ বছর বয়সে বাড়ি থেকে পালিয়ে কলকাতা চলে যান তিনি। অচেনা-অজানা পরিবেশে পেটের তাগিদে জীবন বাঁচাতে কুলিগিরি, রিকশা চালানো, ফেরি করা, খবরের কাগজ বিক্রির মতো বিচিত্র সব কাজ করেছেন তিনি। সেইসময় স্বদেশী আন্দোলনে যোগ দিয়ে বেশ কয়েকবার কারাবরণও করেন।

১৯১৪ সালের ২৮ জুলাই প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়। সেই সময় কিশোর রণদা প্রসাদ সাহা যোগ দেন বাঙালিদের প্রথম সামরিক সংগঠন বা ইউনিট ‘বেঙ্গল এ্যাম্বুলেন্স কোর’-এ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষে সেনাবাহিনী ত্যাগ করে রেলওয়ে বিভাগের টিকিট কালেক্টরের চাকরি নেন। ১৯৩২ সালে এই চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নেন। নিজের সঞ্চয় করা ও অবসরের এককালীন অর্থ দিয়ে শুরু করেন কয়লার ব্যবসা। বছর চারেকের মধ্যেই ব্যবসায়িকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে উঠেন তিনি। ১৯৩৯ সালে জমিদার নৃপেন্দ্রনাথ চৌধুরী, ডা. বিধান চন্দ্র রায়, বিচারপতি জে. এন. মজুমদার ও নলিনী রঞ্জন সরকারকে সঙ্গে নিয়ে তিনি গড়ে তোলেন ‘বেঙ্গল রিভার সার্ভিস’ নামে একটি নৌ-পরিবহণ কোম্পানি। কিন্তু, অল্প কিছুদিনের মধ্যে অন্যান্য শরিকদের কাছ থেকে সব অংশ কিনে নিয়ে তিনি সেই কোম্পানির একক মালিকানা লাভ করেন। তারপর শুধুই এগিয়ে যাওয়া। সেখান থেকে তিনি কোম্পানির লঞ্চগুলির মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের উদ্দেশ্যে নারায়ণগঞ্জে একটি ডকইয়ার্ড নির্মাণ করেন। এ অঞ্চলে এটিই প্রথম ডকইয়ার্ড। সেখানে বেঙ্গল রিভার সার্ভিসের লঞ্চ ছাড়াও অন্যান্য কোম্পানির এবং ব্যক্তিগত লঞ্চও মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হতো।

১৯৪০ সালে রণদা নারায়ণগঞ্জের জর্জ অ্যান্ডারসনের যাবতীয় পাট ব্যবসা কিনে নেন। শিশুকাল থেকে হতদরিদ্র মানুষের কল্যাণের যে স্বপ্ন নিজের মনে লালন করেছিলেন তার বাস্তবায়ন শুরু হয় ১৯৩৮ সালে মাতামহীর নামে “শোভাসুন্দরী ডিসপেনসারি” ও মায়ের নামে “কুমুদিনী হাসপাতাল” প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষে আড়াই শতাধিক লঙ্গরখানা পরিচালনা করেন তিনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সংকটময় মুহূর্তে রণদা প্রসাদ সাহা রেডক্রসকে আড়াই লাখ রূপি দান করেন। সেইসময় এই টাকা দিয়ে ঢাকা শহরে শত শত বিঘা জমি কেনা যেতো। অবহেলিত নারী সমাজকে সমাজের মূলধারায় নিয়ে আসতে ১৯৪০ সালে তার প্র-পিতামহী ভারতেশ্বরী দেবীর নামানুসারে প্রতিষ্ঠা করেন নারী শিক্ষার অনন্য প্রতিষ্ঠান “ভারতেশ্বরী হোমস”।

১৯৪৭ সালে রণদা প্রসাদ সাহা মানবতার কল্যাণে তাঁর যাবতীয় সব ব্যবসা, কল-কারখানা, সম্পত্তি এবং দাতব্য প্রতিষ্ঠানসমূহ পরিচালনার জন্য ‘কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট অব বেঙ্গল’ গঠন করেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগ হওয়ার পর যখন অসংখ্য হিন্দু বাংলাদেশ তথা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে স্রোতের মতো দেশান্তরী হয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে চলে যেতে শুরু করে, সেইসময় কলকাতার ব্যবসা-বাণিজ্যে এবং সেইসাথে সেখানকার অঢেল সম্পদের মায়া ত্যাগ করে সম্পূর্ণ রণদা প্রসাদ সাহা উল্টো নিজের মাতৃভূমিতে অর্থাৎ বর্তমান বাংলাদেশে পাকাপাকিভাবে ফিরে আসেন।

ব্রিটিশ সরকারকে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে সহযোগিতা প্রদানের জন্য রণদা প্রসাদ সাহা ১৯৪৪ সালে ‘রায় বাহাদুর’ খেতাব প্রাপ্ত হন। ১৯৬৯ সালে পাকিস্তান সরকার সমাজসেবার জন্য তাকে ‘হেলাল এ পাকিস্তান’ খেতাব প্রদান করে। পূর্ববাংলার প্রতি পাকিস্তানের বৈষম্যমূলক আচরণের কারণে তিনি পাকিস্তান সরকারের সেই খেতাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে শুভাকাঙ্ক্ষীরা রণদা প্রসাদ সাহাকে দেশত্যাগের পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু, মাতৃভূমি ছেড়ে তিনি কোথাও যেতে রাজি হননি। ১৯৭১ সালের ৭ মে স্থানীয় রাজাকার মাহবুবুর রহমানের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে পাকিস্তানী বাহিনী রণদা প্রসাদ সাহা ও তাঁর ২৬ বছর বয়সী সন্তান ভবানী প্রসাদ সাহা (রবি)-কে তুলে নিয়ে যায় এবং হত্যা করে লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেয়। তাঁরা আর কখনও ফিরে আসেননি। মিশে গেছেন এদেশের মুক্তিযুদ্ধের রক্তাক্ত ইতিহাসের সঙ্গে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই অপরাধে চলতি বছর মাহবুবুর রহমানকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে বাংলাদেশের এই মহান সমাজসেবক এবং দানবীরকে জানাই অন্তরের গভীর থেকে বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি।।
নিলয় চক্রবর্তী।
৫ই ডিসেম্বর ২০১৯ইং।।


© ২০২০ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developer: Tanveer Hossain Munna, Email : tanveerhmunna@gmail.com