সংবাদ শিরোনামঃ
রায়পুর উপজেলার উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে পুনরায় অধ্যক্ষ মামুনের চেয়ারম্যান হওয়া প্রয়োজন লক্ষ্মীপুর জেলায় ৮ম: বারের মতো শ্রেষ্ঠ অফিসার ইনচার্জ নির্বাচিত হলে মোঃ এমদাদুল হক দালাল বাজার ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান হিসেবে কাকে ভোট দিবেন? লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দালাল বাজার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৪নং ওয়ার্ডে মেম্বার পদপ্রার্থী কাজল খাঁনের গণজোয়ার লক্ষ্মীপুরের উপশহর দালাল বাজার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী পাঁচজন,কে হবেন চেয়ারম্যান ? বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ওমান সুর শাখার সহ-সাধারন সম্পাদক কামাল হোসেনের ঈদের শুভেচ্ছা, ঈদ মোবারক এমপি ও মন্ত্রী হতে নয় বরং মানুষের পাশে দাঁড়াতে আ.লীগ করি, সুজিত রায় নন্দী বাড়ছে ভুয়া সাংবাদিকদের দৌরাত্ম্য, নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী পদক্ষেপ চাই বাড়ছে ভুয়া সাংবাদিকদের দৌরাত্ম্য, নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী পদক্ষেপ চাই লক্ষ্মীপুরে বিনা তদবিরে পুলিশে চাকরি পেল ৪৪ নারী-পুরুষ দুস্থ মানবতার সেবায় এগিয়ে আসা “সমিতি ওমান ” কর্তৃক চট্টগ্রামে ইফতার সামগ্রী বিতরণ দলিল যার, জমি তার- নিশ্চিতে আইন পাস লক্ষ্মীপুরে প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে পবিত্র কুমার  লক্ষ্মীপুর সংরক্ষিত আসনের মহিলা সাংসদ আশ্রাফুন নেসা পারুল রায়পুরে খেজুর রস চুরির প্রতিবাদ করায় বৃদ্ধকে মারধরের অভিযোগ
আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর ঘটনার ২০২০

আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর ঘটনার ২০২০

স্টাফ রিপোর্টার

নানান আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর ঘটনার মধ্য দিয়েই পার হলো ২০২০ সাল। বছরের তৃতীয় মাসে বিশ্বের সঙ্গে মহামারী করোনাভাইরাসে জর্জরিত হয় বাংলাদেশ। তাই বছরটিকে মনে রাখা হবে নানা কারণে। তবে সেখানে বেদনার গ্লানিই বেশি। বছরটি প্রিয়জন হারানোর বেদনা দিয়েছে অনেক বেশি।

গত ৮ মার্চ যখন দেশে প্রথম করোনা শনাক্ত হয়, তখন থেকেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়তে থাকে জনজীবনে। শুরুতে সাধারণ মানুষ বিষয়টি খুব একটা গুরুত্ব না দিলেও একটা পর্যায়ে অবহেলার আর সুযোগ ছিল না। একের পর এক স্বজন, প্রিয় মানুষ হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে পুরো জাতি। এর মধ্যেই দেশে নেমে এলো আরেকটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্পান ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও উড়িষ্যা থেকে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানে। এতে প্রাণ হারান ১৬ জন। তবে এ দুর্যোগে অনেক প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হলেও বাংলাদেশ সাহসিকতার সঙ্গে মোকাবিলা করেছে; যার ফলে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি আশঙ্কাজনক হয়নি। প্রবাদ আছে, কপালের লিখন না যায় খ-ন- এ প্রবাদটি যেন বাস্তবে রূপ নিতে থাকে একের পর এক ঘটনার মধ্য দিয়ে। ২৯ জুন রাজধানী ঢাকার শ্যামবাজারে বুড়িগঙ্গায় লঞ্চ দুর্ঘটনায় অন্তত ৩৪ জন নিহত হন, যা সারা দেশের মানুষের অন্তরে নাড়া দেয়।

যুবলীগ নেত্রী পাপিয়াকা- : বছরের শুরুতে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে যুবলীগ নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া র‌্যাবের হাতে আটক হওয়ার ঘটনা; যা সারা দেশে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়। ২২ ফেব্রুয়ারি প্রতারণা, অর্থপাচার, জাল টাকা সরবরাহ, মাদক ব্যবসা ও অনৈতিক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমান সুমনসহ ৪ জনকে আটক করে র‌্যাব। এরপরই পাপিয়ার নানা অপকর্মের ফিরিস্তি বের হতে থাকে। তিনি গুলশানের একটি পাঁচ তারকা হোটেলের প্রেসিডেনশিয়াল স্যুটসহ চারটি কক্ষ ভাড়া নিয়েছিলেন। ২০১৯ সালের ১৩ অক্টোবর থেকে ২০২০ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হোটেলটির কক্ষ ভাড়া, খাবার ও আনুষঙ্গিক খরচ বাবদ পাপিয়া মোট বিল পরিশোধ করেছেন ৩ কোটি ২৩ লাখ টাকা। প্রতিদিন হোটেলের বিলই দিতেন আড়াই লাখ টাকা। অবৈধ অস্ত্রের ব্যবসা, রাজধানীর অভিজাত হোটেলগুলোতে সুন্দরী তরুণী সরবরাহ, মাদক চোরাচালান, চাকরির তদবির, জবরদখল, দেশ-বিদেশে ক্যাসিনো ব্যবসা এমন কোনো অভিযোগ নেই যা তার বিরুদ্ধে নেই। সুন্দর অবয়বের আড়ালে পাপিয়ার পাপের সাম্রাজ্য এতদিন আড়ালেই ছিল। অবশেষে দেশবাসীর কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে তার অপরাধ জগতের বিস্তৃতি। এসব করেই বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হন বলে র‌্যাবকে জানান পাপিয়া। আটকের পর পাপিয়ার মোবাইল ফোন তদন্ত করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তার ফোনটি অশ্লীল ভিডিওতে ঠাসা ছিল। এসব ভিডিওতে সুন্দরী তরুণীদের সঙ্গে উঠতি শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী ছাড়াও আমলা এবং কয়েকজন রাজনৈতিক নেতার অশ্লীল ছবি ছিল। রিজেন্টের সাহেদকা- : বছরের সবচেয়ে আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর ঘটনা ছিল করোনা টেস্ট জালিয়াতি। উত্তরার বেসরকারি রিজেন্ট হাসপাতাল ছিল এ জালিয়াতির কেন্দ্রবিন্দু। হাসপাতালটি টেস্ট না করেই করোনা রিপোর্ট দিত। এছাড়াও সরকার কর্তৃক করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে রোগীদের কাছ থেকে টাকা না নেয়ার কথা থাকলেও রিজেন্ট হাসপাতাল সাধারণ মানুষের কাছ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এসব অভিযোগ ওঠার পরই দেশজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর হয়। অভিযান চালায় রিজেন্ট হাসপাতালে। অভিযানে গিয়ে অভিযোগের প্রমাণও পায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। একপর্যায়ে হাসপাতালটির দুটি শাখা (উত্তরা ও মিরপুর) সিলগালা করে দেয়। একই সঙ্গে হাসপাতালটির চেয়ারম্যান সাহেদ করিম ওরফে মো. সাহেদের বিরুদ্ধে প্রতারণা, অনিয়ম, দুর্নীতি, জালিয়াতিসহ বহু অভিযোগে একাধিক মামলা দায়ের করা হয়।

জেকেজির সাবরিনাকা- : রিজেন্টের সাহেদ কেলেঙ্কারিতে তোলপাড় শুরুর মধ্যেই ওঠে আসে আরেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জেকেজি হেলথ কেয়ারের নাম। এ প্রতিষ্ঠানটিও করোনাভাইরাস পরীক্ষার টেস্ট না করেই রিপোর্ট সরবরাহ করত। জেকেজির চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা চৌধুরী ও তার স্বামী প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী আরিফ চৌধুরী। এ দু’জনের বিরুদ্ধেই করোনা টেস্ট জালিয়াতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠে। শুরু হয় দেশজুড়ে তোলপাড়। বিশেষ করে ডা. সাবরিনা আসেন আলোচনা-সমালোচনার শীর্ষে। ডা. সাবরিনা ছিলেন জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের চিকিৎসক। পাশাপাশি তিনি জেকেজি হেলথ কেয়ারের চেয়ারম্যান। অভিযোগ উঠার পরই তাকে থানায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়। পরে তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। এর আগে তার স্বামী আরিফকেও গ্রেফতার করা হয়। দু’জনকেই কয়েক দফায় রিমান্ডে নেয়া হয়। বর্তমানে তারা কারাগারে বন্দি।

পুলিশের গুলিতে মেজর সিনহা হত্যাকা- : পাপিয়া, সাহেদ আর সাবরিনাকা-ের রেশ কাটতে না কাটতেই দেশে ঘটে আরেক চাঞ্চল্যকর ঘটনা। ৩১ জুলাই কক্সবাজারের টেকনাফে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ নিহত হন। এ নিয়ে সারা দেশে তীব্র আলোচনা আর প্রতিবাদ শুরু হয়। অভিযোগ ওঠে টেকনাফ থানার ওই সময়কার ওসি প্রদীপ কুমার দাশের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় গত ৫ আগস্ট নিহত সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে প্রধান আসামি করে টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ৯ পুলিশ সদস্যকে আসামি করে কক্সবাজার আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলাটির তদন্ত করার আদেশ দেন র‌্যাবকে। এ ঘটনায় ওসি প্রদীপকে প্রথমে ক্লোজড (প্রত্যাহার) এবং পরে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। একই সঙ্গে পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলীকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পাশাপাশি সেখানের সব পুলিশ সদস্যকে একযোগে প্রত্যাহার করা হয়। পরে ওসি প্রদীপ, পরিদর্শক লিয়াকতসহ একে একে ১৪ জনকে গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করা হয়। নেয়া হয় রিমান্ডে। ১৪ আসামির মধ্যে ওসি প্রদীপ কুমার দাস ও কনস্টেবল রুবেল শর্মা ছাড়া অন্য ১২ আসামি তদন্ত সংস্থা র‌্যাবের মাধ্যমে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

ফতুল্লায় মসজিদে ভয়াবহ অগি্নকা- : ৪ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার তল্লায় বায়তুস সালাত জামে মসজিদে ভয়াবহ অগি্নকা-ের ঘটনা ঘটে। মসজিদের পাশের তিতাস গ্যাসের পাইপলাইন থেকে গ্যাস নিঃসরণের ফলে সংঘটিত বিস্ফোরণ ও অগি্নকা-ে ইমাম, মোয়াজ্জিন ও শিশুসহ অন্তত ৩১ জন মুসলি্ল পুড়ে প্রাণ হারান।গ্যাসের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণের ঘটনায় গ্রেফতার তিতাসের ৮ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হয়। ঘটনাটি দেশজুড়ে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি করে।

সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গৃহবধূকে গণধর্ষণ : ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে এক গৃহবধূ গণধর্ষণের শিকার হন। ওই গৃহবধূ তার স্বামীকে নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিলেন। ওই সময় ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী গৃহবধূকে জোর করে ছাত্রাবাসে তুলে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এ সময় গৃহবধূর স্বামীকে কলেজের সামনে বেঁধে রাখা হয়।

এ ঘটনায় সারা দেশে তোলপাড় শুরু হয়। ঢাকাসহ সারা দেশে বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও সমাবেশ শুরু হয়। এর মধ্যেই ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। এ ঘটনায় ভিকটিমের স্বামী বাদী হয়ে ওই রাতেই শাহপরান থানায় মামলা করেন। মামলায় ছাত্রলীগের ছয় নেতাকর্মীসহ অজ্ঞাত আরও তিনজনকে আসামি করা হয়।

বেগমগঞ্জে গৃহবধূকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন ও ভিডিও ভাইরাল : এমসি কলেজের গণধর্ষণকা-ে বিক্ষোভ আর প্রতিবাদে সারা দেশ যখন উত্তাল- এর মধ্যেই ৪ অক্টোবর ঘটে আরেকটি ঘটনা। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে এক গৃহবধূকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের ৩২ দিন আগে ধারণকৃত ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে দেশব্যাপী ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। পরে জানা যায়, ২ সেপ্টেম্বর রাত ৯টায় একলাসপুরের কুখ্যাত দেলোয়ার বাহিনী জয়কৃষ্ণপুর গ্রামের গৃহবধূর (২৮) বাড়িতে হামলা করে তার স্বামীকে ঘরের বাহিরে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখে। এ সময় তাকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করে এবং তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল করে।

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ইস্যু : এরপর বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট ঘটনা ঘটলেও ১৩ নভেম্বর আবার একটি ইস্যু নিয়ে তীব্র আলোচনা-সমালোচনা আর বিক্ষোভ শুরু হয়। সমপ্রতি ঢাকায় দুটি পৃথক সমাবেশ করে হেফাজতের নেতা মামুনুল হক ও ফয়জুল করিম চরমোনাই পীর ধোলাইপাড়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মাণাধীন ভাস্কর্যকে মূর্তি আখ্যা দিয়ে বাংলাদেশে যে কোনো ধরনের ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা করে বক্তব্য দেন। তাদের বক্তব্যের পরই রাজনীতি অঙ্গনসহ সারা দেশে আন্দোলন ও প্রতিবাদ শুরু হয়। বর্তমানে কিছুটা শান্ত থাকলেও বিষয়টি একেবারেই থেমে যায়নি।


© ২০২০ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developer: Tanveer Hossain Munna, Email : tanveerhmunna@gmail.com