সংবাদ শিরোনামঃ
দালাল বাজার ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান হিসেবে কাকে ভোট দিবেন? লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দালাল বাজার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৪নং ওয়ার্ডে মেম্বার পদপ্রার্থী কাজল খাঁনের গণজোয়ার লক্ষ্মীপুরের উপশহর দালাল বাজার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী পাঁচজন,কে হবেন চেয়ারম্যান ? বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ওমান সুর শাখার সহ-সাধারন সম্পাদক কামাল হোসেনের ঈদের শুভেচ্ছা, ঈদ মোবারক এমপি ও মন্ত্রী হতে নয় বরং মানুষের পাশে দাঁড়াতে আ.লীগ করি, সুজিত রায় নন্দী বাড়ছে ভুয়া সাংবাদিকদের দৌরাত্ম্য, নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী পদক্ষেপ চাই বাড়ছে ভুয়া সাংবাদিকদের দৌরাত্ম্য, নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী পদক্ষেপ চাই লক্ষ্মীপুরে বিনা তদবিরে পুলিশে চাকরি পেল ৪৪ নারী-পুরুষ দুস্থ মানবতার সেবায় এগিয়ে আসা “সমিতি ওমান ” কর্তৃক চট্টগ্রামে ইফতার সামগ্রী বিতরণ দলিল যার, জমি তার- নিশ্চিতে আইন পাস লক্ষ্মীপুরে প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে পবিত্র কুমার  লক্ষ্মীপুর সংরক্ষিত আসনের মহিলা সাংসদ আশ্রাফুন নেসা পারুল রায়পুরে খেজুর রস চুরির প্রতিবাদ করায় বৃদ্ধকে মারধরের অভিযোগ লক্ষ্মীপুরে আলোচিত রীয়া ধর্ষণের বিষয়ে আদালতে মামলা তিনশ’ বছরের ঐতিহাসিক ‘খোয়াসাগর দিঘি’র নাম পরিবর্তনের কোন সুযোগ নেই, জেলা প্রশাসক’
বিনয়া’র মিনতি চৌধুরী রিগ্যান

বিনয়া’র মিনতি চৌধুরী রিগ্যান

 

ভিবি নিউজ ডেস্ক:
বিনয়া সেন আমার বন্ধু। শৈশবে গোল্লাছুট মাঠে তার-আমার পরিচয়। সেই থেকেই পথচলা-হাতধরা। প্রাইমারী থেকে সেকেন্ডারির কিছুটা সময় পর্যন্ত তার সাথে আমি ছিলাম। তার চঞ্চলতা, সর্বক্ষেত্রে দক্ষতা, পরোপকারিতা ছিল বিশেষ গুণের কয়েকটি। যখন বুঝতে শিখেছি তখন তাকে ভাবতে চেয়েছিলাম অন্যভাবে-একান্তভাবে। স্বপ্ন ছিল কবিতা কিবা কাব্য লেখার। ভুলটি সে-ই প্রথম ধরিয়ে দিয়েছিল। একদিন তালুকদার বাড়ীর মোড়ে বিনয়াকে একা পেয়ে আমতা আমতা ভাবে কিছু একটা বলতে চেষ্টা করছিলাম। হয়তো সে বুঝেছে নয়তো কেন আমার হাত দু’খানা মুঠোবন্দী করে ইষৎ হাসি হেসে বারবার বলছিল, “তুইতো আমার বন্ধু-প্রাণের”। সেদিন আমি প্রতিবাদ করিনি-করার সাহস হয়নি। বাকরুদ্ধ অবস্থায় মাথানত করে তার সামনে খানিক দাঁড়িয়ে থাকা ব্যতীত তখন আমার দ্বিতীয় কিছু করার ছিল না।

বিশেষ কারণে আমাকে গ্রামের স্কুলটি ত্যাগ করতে হয়েছিল। বিশাল বিশাল স্বপ্ন নিয়ে শহরে মাথা গুজার যুদ্ধে নিয়োজিত যুদ্ধবাজদের দলে আমিও শরিক হলাম। বিদায় বেলায় বিনয়া কঠিনভাবে প্রতিজ্ঞা করিয়ে দিল- পত্র যোগাযোগ যেন বিনষ্ট না করি। প্রথম প্রথম শহরের নতুন নতুন অভিজ্ঞতা-যন্ত্রণা-বঞ্চনার কথাগুলো তাকে লিখতাম। ঠিকে থাকার যন্ত্র-মন্ত্র জানিয়ে সে প্রতি উত্তর দিত। এভাবে চলছিল কিছুকাল। কিন্তু একসময়, যেন হঠাৎ করেই তাকে ভুলে গেলাম। সময় হতনা লেখার-ভাবার। তবে কিছু সময় পর্যন্ত তার চিঠি লেখা অব্যাহত ছিল। আমার উত্তর না পেয়ে সেটিও একসময় বন্ধ হয়ে গেল।

বিনয়া আমার যে ঠিকানায় চিঠি লিখত সেটি পরিবর্তিত হয়েছে। গত তিন বছর তার-আমার কোন যোগাযোগ নেই। ভেবেছি, সে সংসার নিয়ে ইতিমধ্যে সে হয়তো ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। একদিন সন্ধ্যায় ক্লান্ত শরীরে ঘুমচ্ছি। অস্পষ্ট ডাকাডাকির শব্দে অসময়ের স্বপ্নটি নষ্ট হয়ে গেছে। চোখ খুলে দেখি মাসুদ একটি হলুদ ইনভেলাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে। আমার চিঠি হয়তো। পূর্বের ঠিকানায় এসেছে বলে শুভার্থী মাসুদ তা নিয়ে এসেছে। খামটি নিলাম। প্রথম দেখাই বুঝেছি বিনয়া লিখেছে। খামের উপরের এককোণয় ছোট্ট করে লেখা ছিল ”জরুরী”। দ্রুততার সহিত সেটি খুললাম। ভীতরে এক পাতায় বিনয়া গুড়ি গুড়ি অক্ষরে লিখেছে-

“প্রিয় বন্ধু,
সময়টা আমার এখন অসহনীয়। চলে যাবার ব্যস্ততা এসে গেছে। এই পৃথিবীর বর্বরতা-নিষ্ঠুরতা নিয়ে বেঁচে থাকার ইচ্ছেটা শেষ। আর কাউকে কষ্ট দিতে চাইনা। যাবার বেলায় তোকে একটিবার দেখতে চাই। আমার শেষ ইচ্ছেটি নিশ্চয় তুই পূরণ করবি।
ইতি
তোরই বিনয়া”

খানিক আগে হয়তো তেমনি কোন দু:স্বপ্ন দেখছিলাম যেটি বিনয়া লিখেছে। বিশেষ দেরী না করে বিনয়ার উদ্দেশ্যে দ্রুত রওনা হলাম। ভোরে ভোরে বিনয়াদের বাড়ীতে ঢুকে দরজা নক করতেই মাসী (বিনয়ার মা) দরজা খুলে জানতে চাইলেন আমি কে-কি আমার পরিচয়। নিজের পরিচয় বর্ণনা করতেই তিনি কিছুটা আশ্চর্যান্বিত হয়ে গেলেন আমার মারাত্মক শারীরিক পরিবর্তন দেখে। বিনয়া কথা জানতে চাইলাম। অস্পষ্টভাবে শুনলাম “অমি এখানে”। মাসীর পিছন থেকে বিনয়া বাহিরে এলো। লম্বা ঘোমটায় বিনায়কে বেশ অস্পষ্ট দেখাচ্ছে। তার ঘোমটা দেবার কারণটি আমার অজানা। কর্তবার্তায় বিশেষ দৃঢ়তা নেই। অগোছালো ভাবে বলছিল, “তুই আসবি জানতাম, তোর জন্যই অপেক্ষা করছি, তুই যাবি তো আমিও যাব”। তার কথার আদ্যোপান্ত কিছুই বুঝিনা। কিছুপরে অল্পস্বরে জানতে চাইলাম গত তিন বছরের অজানা কথাগুলো, আরও চাইলাম তার ঘোমটা দেবার কারণটি। আমার প্রশ্নবাণে জর্জরিত বিনয়া হঠাৎ নিশ্চুপ-বাকরুদ্ধ, নিম্নে তার দৃষ্টি কিন্তু দু’ চোখ থেমে থাকেনি। অথৈই ঝড়ে ঝরছে। আলতো হাতে তার হাতখানা ধরে আবারো বললাম, “বিনয়া, কি হয়েছে”। বাকহীন শব্দে সে ঘোমটা নামাল। আমি একপলক চেয়ে দেখেছি মাত্র, দ্বিতীয় আর পারিনি। ডান চোয়ালের অর্ধাংশ থেকে গলার কিছু অংশ পর্যন্ত পুরো ঝলসে আছে। আমি ভাবতে পারিনি তখন কিছু, চোখই যেন কথা বলছে। অবিরাম স্রোত তার হাতের স্পর্শে সামান্য বাধা পাচ্ছিল। ক্ষিপ্ততা সাথে জানতে চাইলাম, কেন-কি করে-কারা এসব করেছে? তার ছোট্ট উত্তর ছিল, “রূপ”। গ্রাম্য লোভীদের থেকে নিজেকে রক্ষার আপ্রাণ চেষ্টা করে ব্যর্থ বিনয়া এখন ক্ষুব্ধ-উত্তেজিত নিজের উপর। নিজের রূপের কারণের এই পরিণতি তার এবং তার পরিবারের। সত্যিই, বছর চারেক আগে তার জন্মদিনে যখন তাকে দেখেছি তখন আমিই ঠাট্টা করে বলেছি, “বিনয়া, তুইতো মাধুরীর কার্বন কপি”। আজ বিনয়ার মাঝে মাধুরীর সৌন্দর্য নেই। নেই রূপের দোহাই-বড়াই কিবা গুণকীর্তন। কলঙ্কের কালিমা লেপন পড়েছে তার রূপে। বাঁচার অধিকার নাকি সে হারিয়ে ফেলেছে, আমি সাহস দিয়েছি। কিন্তু না, সে তার পরিবারকে মুক্তি দেবার চিন্তায় বিভোর।

সন্ধ্যা ঘনিয়ে রাত হতে চলেছে। আমাদের গ্রামের বাড়িটি বিক্রি হয়েছে বহুআগে। দূর সম্পর্কীয় যারা আছেন তাদের সাথে আমার সু-পরিচয় নেই। তাই রাতেই ঢাকা ফিরতে হবে। বিনয়া বহুবার বলেছে রাতটা তাদের ওখানেই কাটিয়ে দিতে। আমি সমাজ চিন্তা করে সেটি করতে চাইলাম না। কিন্তু বিনয়া “সমাজ” নামের শব্দটিকে বিশ্বাস করতে জারি নয়। তার কথায়, সমাজে মানে ধোঁকা-শক্তিশালীর ধন-দুর্বলের বিনাশী মূর্তি। আমাকে সমাজ বিশ্বাস করে নিজেকে কূলষিত না করার পরামর্শ দিয়েছে। আমি রাজি হতে চাইলাম কিন্তু মাসীর স্পষ্ট চোখের ইশারায় মত ফিরিয়ে নিয়েছি। তিনি হয়তো সমাজকে খুব ভালবাসেন এবং ইশারায় আমাকেও তার পথ অনুসরণ করার একান্ত অনুরোধ করেছেন। ঢাকায় ফেরার মনস্থিরটা করে ফেলেছি ততক্ষণে। বিদায় পর্বে বিনয়ার মায়াভরা হাত দুটো বারবারই জড়িয়ে ধরেছে আমাকে, তার পবিত্র চোখের জলে ভেসে গেছে আমার প্রাণহীন বুকখানি। আমি কিছুই বুঝিনি বিনয়া এত কেন কাঁদছে। শেষবার মিনতির সূরে বলেছিল, “শোন বন্ধু, কারোর কলঙ্ক দেখে পুলকিত হইওনা, কলঙ্কের প্রতিশোধ নিতে যদি নাই পার অন্তত প্রতিবাদটুকু কর”।

অল্প সময় পরেই ভোর হবে। গাড়ী ঠিক ঢাকার কাছাকাছি। মোবাইল বাজার শব্দে ঘুমের ভাবটি কেটে গেছে। স্ক্রিনে দেখি বিনয়ার ছোট ভাইয়ের মোবাইল থেকে কল এসেছে। রিসিভ করতেই কারোর শোর-চিৎকার শুনতে পেলাম। কলটি কেটে গেল। ব্যাক করলাম। বিজয় ধরতেই জানতে চাইলাম কি ঘটছে-কি হয়েছে? তার উত্তর কাঁপা কাঁপা। হালকাভাবে বারকয়েক শুনেছি থেকে, “দিদি নেই, দিদি নেই”।

দু:সংবাদটি আমার পাবার অধিকার ছিল বলেই হয়তো জেনেছি-শুনেছি, কিন্তু এমন কিছুই আমি কামনা করিনি। সারারাত অঘূম চোখে চিন্তা করেছি প্রিয় বিনয়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে। একটা ভাবনাও ঠিক করেছিলাম। ভোর হলেই ফোন করে বলব ভেবেছি। কিন্তু না, বিনয়া সেই সময়টুকু দেয়নি।

লেখা: চৌধুরী রিগ্যান
২৩ জুন ২০০৬ইং।

(সংগৃহীত)


© ২০২০ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developer: Tanveer Hossain Munna, Email : tanveerhmunna@gmail.com