ভিবি নিউজ ডেস্ক:
দেখতে চাই।অমুক ভাইকে অমুক পদে দেখতে চাই। বহুল চর্চিত এসব কথামালার চাটুকারিতা দেখে এখন আর মানুষ অবাক হয় না। মানুষ এখন পরিণত বোধবুদ্ধিসম্পন্ন। তারা এসব দেখে,শোনে, নি:শব্দে হাসে। অনুচ্চ কণ্ঠে মন্তব্যও করে।
অবশ্য সবক্ষেত্রেই যে চাটুকারিতা তা-ও বা বলি কেন?রাজনীতিক,সমাজসেবীদের মাঝে এখনও অনেকে আছেন যারা সত্যিকার অর্থেই ভালো মানুষ। দেশপ্রেমিক।দেশকে ভালোবাসেন। দেশের মঙ্গলের জন্য প্রাণপাত করেন। নইলে যে রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থায় অনেক আগেই নৈরাজ্য নেমে আসত। কিন্তু যাদের নিয়ে ‘ দেখতে চাই ‘ কথাটির অবতারণা তারা এখন সমাজের প্রতিটি স্তরে সদর্পে দাবড়ে বেড়াচ্ছে। এরা নীতি নৈতিকতাহীন,দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতির কীট।পদ-পদবি করায়ত্ত করে সমাজকে প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে এরা কলুষিত করছে।লুটে নিচ্ছে রাষ্ট্রের সম্পদ। তারপরও এই দুর্বৃত্ত লুটেরার দল ‘ সমাজসেবক ‘।কালে কালে যুগে যুগে এরা ছিল। আছে।থাকবে।
রাষ্ট্রের নিচু স্তর থেকে উপর পর্যন্ত চলছে এদের দুর্নীতি। সরকারি বেসরকারি সবক্ষেত্রেই দুর্নীতির মহোৎসব। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেও এদের থামানো যাচ্ছে না। দু:খজনক হলো, জনপ্রতিনিধিদের দুর্নীতি দিনদিন মাত্রাহীনভাবে বেড়ে চলেছে। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে উপরিস্তর পর্যন্ত প্রায় সর্বত্রই একই চিত্র।সরকারদলীয় প্রধানের কঠোর নির্দেশও তাদের থামাতে পারছে না।
ইউনিয়ন পরিষদ গণপ্রতিনিধিশাসিত একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তর। এক্ষেত্রে দুর্নীতি হলে তা সরাসরি সাধারণ মানুষকে অধিকারবঞ্চিত করে। সরকারের নানাবিধ জনকল্যাণমূলক কাজ করে থাকে ইউনিয়ন পরিষদ। উন্নয়নমূলক কাজ যেমন, রাস্তা,পুল,কালভার্ট, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ নানা অবকাঠামো নির্মাণ। বর্তমান সরকারের জনবান্ধব কর্মসূচি বিধবাভাতা,বয়স্কভাতা,মাতৃত্বকালীন ভাতা,গৃহহীনদের জন্য আবাস নির্মাণ,আপৎকালীন সাহায্য বিতরণ, আরও অনেক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হয় পরিষদকে। কিন্তু এসবক্ষেত্রে আমরা কী দেখি? কোথাও কি আদৌ কোনও স্বচ্ছতা রয়েছে? আমার ইউনিয়নকেই উদাহরণ হিসেবে নেয়া যাক। মুক্তিযুদ্ধের গর্বিতভূমি লক্ষ্মীপুর সদরের উত্তর হামছাদি ইউনিয়ন। ইউনিয়নটি ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের দুর্ভেদ্য দুর্গ। সদর থেকে স্বল্পদূরত্বের এই জনপদ পাকি সৈন্যরা বারবার আক্রমণ করেও দখলে নিতে পারেনি,মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বের কাছে পর্যুদস্ত হতে হয়েছে। স্বভাবতই জনগণ আশা করেছিল,অন্যান্য ইউনিয়নগুলোর তুলনায় এই ইউনিয়ন উন্নয়নমূলক কাজে অনেকটা এগিয়ে থাকবে। কিন্তু জনগণকে কেবল হতাশ হতে হয়েছে।অনেকে মনে করেন,লক্ষ্মীপুর সদরের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া অনগ্রসর ইউনিয়ন এটি।কোথাও স্বচ্ছতা নেই,উন্নয়নমূলক কাজ দায়সারা গোছের। সালিশ দরবার আশানুরূপ নয়।ভুক্তভোগী মানুষ যথাযথ বিচার পায় না।মাদক বেচা-কেনা,বখাটে কিশোরদের উৎপাত,স্কুলের ছাত্রীদের নিরাপত্তাহীনতা এসব সামাজিক সমস্যা ক্রমশই বাড়ছে,মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলছে।দখলবাজি,সালিশবাজি বাড়ছে দ্রুত। স্কুল ,মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটির পদও দখল হচ্ছে। গায়ের জোরে,অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে দখলে নেয়া হচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্তৃত্ব।অনক্ষর ব্যক্তিও কমিটির সদস্য হচ্ছে। সময়মত নির্বাচন না দিয়ে প্রতিষ্ঠান প্রধানের যোগসাজশে বছরের পর বছর এডহক কমিটির নামে পদ দখলে রাখা হচ্ছে। মসজিদগুলোতে কোনও কোনও ইমাম সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়াচ্ছেন।প্রধানমন্ত্রীকে বিদ্ধ করছেন অশ্লীল বাক্যবাণে। চেয়ারম্যান সাহেব সবকিছু জেনেও নীরব থাকেন।এখন অত্র এলাকায় আজাবি-হেজাবি মিলেমিশে একাকার। পরিস্থিতি এতই নাজুক যে,স্বাধীনতাপ্রিয় তরুণরা আজ দিগভ্রান্ত,হতাশায় নিমজ্জিত। হাল ধরার কথা চেয়ারম্যান সাহেবের। তিনি আবার দলেরও সভাপতি। অফুরন্ত ক্ষমতা তার।কিন্তু ওই যে, ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার জন্য তিনি আপসের চোরাগলিতে হাঁটছেন। এই
নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির দায়ভাগ নিশ্চিতভাবে তাকেই নিতে হবে।
ভাতা পেতে হলে দিতে হয় নজরানা। চেয়ারম্যান সাহেবের কাছের লোকদের সন্তুষ্ট করতে হয় আগে। কথাগুলো রূঢ় হলেও বাস্তব। জনপদে কান পাতলে ফিসফিস আওয়াজ শোনা যায়। মানুষের নানা অভিযোগ। তবুও তিনি জনপ্রতিনিধি! গত নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিল না। তিনি সবদিক ‘ম্যানেজ’ করেছেন।
এবারও কি তাই হবে?মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের এই চারণভূমিতে মানুষ একজন সৎ সাহসী শিক্ষিত সজ্জন ব্যক্তিকে তাদের নেতৃত্বে দেখতে চায়। এ লেখা পড়ে কেউ যদি গোসসা করেন সেক্ষেত্রে আমি কেবল দু:খ প্রকাশ করতে পারি। এ মাটিতে জন্মেছি,এ মাটিতে দাঁড়িয়ে লড়াই করেছি। এই ইউনিয়নের মানুষ আমাদের আশ্রয় দিয়েছে,খাবার দিয়েছে। সেটা ভুলে অকৃতজ্ঞ হতে চাই না।এখানকার মানুষকে আমি গভীরভাবে ভালোবাসি।
জীবনের শেষ লগ্নে এসে মানুষের ঋণ শোধ করতে চাই। একজন সৎ মানুষের খোঁজে আমি ইউনিয়নবাসীর পাশে আছি।
আসুন,দুর্নীতি ও দখলবাজির বিরুদ্ধে সোচ্চার হই। বঙ্গবন্ধুর আরাধ্য শোষণমুক্ত সমাজ নির্মাণের জন্য বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়াই। নিজ নিজ অবস্থান থেকে লড়াই ও প্রতিবাদ অব্যাহত রাখি।
পুনশ্চ: একটি ইউনিয়ন পরিষদে বিভিন্নখাতে বার্ষিক বরাদ্দকৃত টাকা ও অনুদানের পরিমাণ জানার অধিকার জনগণের আছে।পরিষদের নোটিশ বোর্ডে জনগণের অবগতির জন্য তা জানিয়ে দিলে চেয়ারম্যান ও পরিষদের সদস্যবৃন্দ স্বচ্ছতা ও সততার পরিচয় দেবেন।কারণ যে কোনও তথ্য জানার অধিকার জনগণের আছে।