চার বছর দেড় মাস পর সচিবদের সাথে বৈঠকে বসেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় বাচ্চারা ঘরে থাকতে থাকতে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি স্কুলগুলোও দ্রুত খুলে দেয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। এ এসময় উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সচিবদের নির্দেশ দেন তিনি। গতকাল বুধবার ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত সচিব সভায় এ নির্দেশনা দেন তিনি। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের পরিকল্পনা বিভাগের এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত সচিব সভায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সর্বশেষ সচিব সভা অনুষ্ঠিত হয় ২০১৭ সালের জুলাই মাসে। এরপর গত ৪ জুলাই চার বছর পর সচিব সভা করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে ওই সভা স্থগিত করা হয়। চলতি বছর করোনার সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার পর নতুন করে সচিব সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
সভায় সংশ্লিষ্ট সচিব বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়ার ব্যবস্থা করছি। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু বিশ্ববিদ্যালয় নয়, দ্রুত স্কুলগুলোও খুলে দেয়ার ব্যবস্থা করেন। কারণ, বাচ্চারা ঘরে থাকতে থাকতে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। বাচ্চারা মানসিকভাবেও অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে। সবার জন্য টিকা নিশ্চিত করতে হবে। জরুরি ভিত্তিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে হবে। সচিব সভায় স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) চ্যালেঞ্জ, ডেল্টা প্ল্যান, সবার জন্য টিকা নিশ্চিতকরণ, খাদ্য নিশ্চিতে গবেষণা, কৃষি ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ে সমন্বয় নিয়ে আলোচনা হয়। কৃষি যান্ত্রিকীকরণ নিয়েও সভায় আলোচনা হয়। প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০২১-২০৪১) বাস্তবায়নে সচিবদের আরো আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনা পরিস্থিতি ও প্রণোদনা দেয়ার বিষয়েও সচিব সভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সচিবদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন বাড়ানো হয়েছে, গাড়ি দেয়া হয়েছে, আবাসনসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বেড়েছে। এখন দেশের জন্য আপনাদের দেয়ার পালা। দুর্নীতির বিষয়ে জিরো টলারেন্স। কোনোভাবেই দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয়া হবে না।
উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সচিবদের নির্দেশ : সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারের পরিকল্পনাগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়ে টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের প্রেক্ষিত পরিকল্পনা বা ডেল্টা প্ল্যান, সেগুলো মাথায় রেখে আমাদের উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং সেগুলোর বাস্তবায়ন যেন যথাযথভাবে হয়। তিনি বলেন, লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা যেন কোনোভাবে ব্যর্থ না হয়। বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব। তিনি আরো বলেন, উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে ইতোমধ্যে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। আমাদের ভবিষ্যতে আরো অনেক দূর যেতে হবে এবং সে পরিকল্পনা আমরা নিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের একটাই লক্ষ্য তৃণমূল পর্যায়ের মানুষগুলো তারা উন্নত জীবন পায়, দারিদ্রের হাত থেকে মুক্তি পায়, অন্ন-বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসার সুযোগ পায়, বাংলাদেশ যেন যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে ভবিষ্যতেও যেন এভাবে এগিয়ে যেতে পারে। সেভাবে আমাদের কার্যক্রম চালাতে হবে। তারই ভিত্তি আমরা তৈরি করেছি, সেটা ধরে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সেই কথা মাথায় রেখে আমাদের সব সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের তো একটাই লক্ষ্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন এবং বাংলাদেশটাকে তিনি উন্নত সমৃদ্ধ করতে চেয়েছিলেন। আমরা সে লক্ষ্য পূরণে কাজ করছি।