পুলিশকে মানুষের আস্থা অর্জন করতে হবে উল্লেখ করে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সবসময় দেশের মানুষের তোমাদের পাশে থাকতে হবে, মানুষের সেবা করতে হবে। মানুষের সেবা করাটাই তোমাদের কর্তব্য, সেটি মনে রাখতে হবে। পুলিশকে মানুষের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করতে হবে। মানুষের ভালোবাসা আস্থা বিশ্বাস অর্জন করতে পারলে পুলিশের সংখ্যার প্রয়োজন হবে না, মানুষকে সঙ্গে নিয়েই এ দেশের যে কোনো অপরাধ দমন করা যাবে। গতকাল রোববার শিক্ষানবিস সহকারী পুলিশ সুপারদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে তিনি এ সব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি রাজশাহীতে বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে যুক্ত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুলিশকে জনগণের বাহিনীতে পরিণত করেছে তার সরকার। পুলিশের দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রযুক্তিগত বিভিন্ন সুবিধা সংযুক্ত করা হয়েছে বাহিনীটিতে। এ সময় সরকার প্রধান পুলিশ সদস্যদের জন্য বিভিন্ন সময় তার সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ ও প্রশিক্ষণের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, নানা ধরনের অপরাধ দমনে কাজ করছে পুলিশ, এজন্য বাহিনীর নতুন নতুন ইউনিট গঠন করা হয়েছে, জঙ্গি দমনেও ভূমিকা রেখেছে পুলিশ। অপরাধের ধরন পাল্টেছে। সেসব মোকাবিলায় পুলিশকে সতর্ক হতে হবে। সাইবার ক্রাইম নির্মূলে পুলিশের ভূমিকার প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় শান্তিরক্ষা মিশনে পুলিশ দক্ষতার পরিচয় দিয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছে বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
এ সময় স্বাধীন দেশের পুলিশ এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পুলিশ সপ্তাহে রাজারবাগ পুলিশ লাইনন্সে বাংলাদেশ পুলিশের উদ্দেশে দেয়া জাতির পিতার বক্তব্যের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। জাতির পিতার বক্তব্যের উদ্ধৃতি তুলে ধরে বলেন, একটা কথা ভুললে চলবে না তোমাদের। তোমরা স্বাধীন দেশের পুলিশ। তোমরা ইংরেজের পুলিশ নও, তোমরা পাকিস্তানি শোষকদের পুলিশ নও। তোমরা জনগণের পুলিশ। তোমাদের কর্তব্য জনগণকে সেবা করা, জনগণকে ভালোবাসা দুর্দিনে জনগণকে সাহায্য করা। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কথা এবং নির্দেশনা জাতির পিতা দিয়ে গেছেন। আজকে নবীন অফিসাররা আপনারা শপথ গ্রহণ করেছেন। সেই শপথ নিয়েই তোমাদের চলতে হবে। সেই সঙ্গে জাতির পিতার এ নির্দেশনাগুলোও তোমাদের মেনে চলতে হবে।
‘জাতির পিতা তার জীবনটা উৎসর্গ করেছিলেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সবকিছু ত্যাগ করে দেশ স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন, এদেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য। সেই কাজটি করতে হলে পুলিশ বাহিনীর অনেক দায়িত্ব। আমি আশা করি এ দায়িত্বটা পালন তোমরা করবে এবং তোমরা যে জ্ঞান অর্জন করেছ, প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জন করেছ, তোমাদের শৃঙ্খলা, পেশাদারিত্ব সততা এবং নৈতিক মূল্যবোধ নিয়ে চলতে হবে। সবসময় দেশের মানুষের পাশে থাকতে হবে। মানুষের সেবা করতে হবে। মানুষের সেবা করাটাই তোমাদের কর্তব্য, সেটি মনে রাখতে হবে’ বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি অসহায় ও বিপদগ্রস্ত মানুষের প্রতি আন্তরিকভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া এবং জনগণের আস্থা ভালোবাসা অর্জনে নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। পুলিশের উদ্দেশে দেয়া জাতির পিতার আরেকটি বক্তব্যের কয়েকটি লাইন তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। মনে রাখবেন, আপনাদের মানুষ যেন ভয় না করে। আপনাদের যেন মানুষ ভালোবাসে। আপনারা জানেন অনেক দেশে পুলিশকে মানুষকে শ্রদ্ধা করে। আপনারা শ্রদ্ধা অর্জন করতে শিখুন। এ পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুলিশ বাহিনীকে তিনি এই আহ্বানটাই করেছিলেন। পুলিশকে মানুষের আস্থা বিশ্বাস অর্জন করতে হবে। মানুষের ভালোবাসা অর্জন করতে হবে। আর মানুষের ভালোবাসা আস্থা বিশ্বাস অর্জন করতে পারলে পুলিশের সংখ্যার প্রয়োজন হবে না, মানুষকে সঙ্গে নিয়েই এ দেশের যে কোনো অপরাধ দমন করা যাবে। কাজেই সেইভাবেই নিজেদের গড়ে তুলতে হবে, সেটাই আমরা চাই। কারণ আমাদের দেশে বিভিন্ন সংগ্রামের মধ্যদিয়েই আমরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছি। নইলে ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টের পর গণতন্ত্র তো বন্দি হয়ে গিয়েছিল ক্যান্টনমেন্টের ভেতরেই। জনগণের ক্ষমতা জনগণের হাতে ফিরে আসা, অনেক সংগ্রামের মধ্যদিয়ে আমরা জনগণের ক্ষমতা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিয়েছি। কাজেই জনগণ এই স্বাধীনতার সুফল পাবে। উন্নত জীবন পাবে। সেটাই হচ্ছে আমাদের আকাঙ্ক্ষা। সেদিকে লক্ষ্য রেখে সমগ্র বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নের কাজ করে যাচ্ছি। আমরা ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ প্রণয়ন করে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হবে। সেই লক্ষ্য নিয়েই পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা নিয়েছি এবং আমরা অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছি। এটা বাস্তবায়নে পুলিশেরও ভূমিকা রয়েছে। আর আজকের নবীন কর্মকর্তা ২০৪১-এর সৈনিক। কাজেই সেভাবে নিজেকে গড়ে তুলবেন সেই আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমি আশা করি, এই বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনী পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় জনগণের মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার, আইনের শাসনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিবে এবং আমরা গণতন্ত্রকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার মাধ্যমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করে দেশের মানুষের জীবনে শান্তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করব। করোনাভাইরাস থেকে দেশ মুক্তি পেয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতির গতি অব্যাহত থাকুক। দেশ এগিয়ে চলুক, সারাবিশ্বে বাংলাদেশ যেন উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে জাতির পিতার স্বপ্নের বাংলা হয়ে গড়ে উঠতে পারে সেই কামনা করি। বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদসহ অন্যরা।