সংবাদ শিরোনামঃ
রায়পুর উপজেলার উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে পুনরায় অধ্যক্ষ মামুনের চেয়ারম্যান হওয়া প্রয়োজন লক্ষ্মীপুর জেলায় ৮ম: বারের মতো শ্রেষ্ঠ অফিসার ইনচার্জ নির্বাচিত হলে মোঃ এমদাদুল হক দালাল বাজার ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান হিসেবে কাকে ভোট দিবেন? লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দালাল বাজার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৪নং ওয়ার্ডে মেম্বার পদপ্রার্থী কাজল খাঁনের গণজোয়ার লক্ষ্মীপুরের উপশহর দালাল বাজার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী পাঁচজন,কে হবেন চেয়ারম্যান ? বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ওমান সুর শাখার সহ-সাধারন সম্পাদক কামাল হোসেনের ঈদের শুভেচ্ছা, ঈদ মোবারক এমপি ও মন্ত্রী হতে নয় বরং মানুষের পাশে দাঁড়াতে আ.লীগ করি, সুজিত রায় নন্দী বাড়ছে ভুয়া সাংবাদিকদের দৌরাত্ম্য, নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী পদক্ষেপ চাই বাড়ছে ভুয়া সাংবাদিকদের দৌরাত্ম্য, নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী পদক্ষেপ চাই লক্ষ্মীপুরে বিনা তদবিরে পুলিশে চাকরি পেল ৪৪ নারী-পুরুষ দুস্থ মানবতার সেবায় এগিয়ে আসা “সমিতি ওমান ” কর্তৃক চট্টগ্রামে ইফতার সামগ্রী বিতরণ দলিল যার, জমি তার- নিশ্চিতে আইন পাস লক্ষ্মীপুরে প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে পবিত্র কুমার  লক্ষ্মীপুর সংরক্ষিত আসনের মহিলা সাংসদ আশ্রাফুন নেসা পারুল রায়পুরে খেজুর রস চুরির প্রতিবাদ করায় বৃদ্ধকে মারধরের অভিযোগ
সরকার কঠোর অবস্থানে স্বাস্থ্য খাতের রাঘববোয়ালদের ত্রাহী মধুসূদন অবস্থা

সরকার কঠোর অবস্থানে স্বাস্থ্য খাতের রাঘববোয়ালদের ত্রাহী মধুসূদন অবস্থা

ভিবি নিউজ-করোনা মহামারীর সময় দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতের দুরবস্থার চিত্র স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। পদে পদে অনিয়ম, দুর্নীতি, লুটপাট, স্বজনপ্রীতির ছবি একে একে প্রকাশ্যে আসছে। ফলে এ খাতকে কলংক মুক্ত করেতে সরকার কঠোর অবস্থানে। এ কারণে স্বাস্থ্যখাতের রাঘব বোয়ালদের ত্রাহি মধুসূধন অবস্থা। এমনকি কোভিড-১৯ তথা করোনা রোগীদের সেবায় নিয়োজিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ‘নকল’ মাস্ক সরবরাহ করায় ফেঁসে গেছেন ছাত্রলীগের সাবেক নেত্রী শারমিন জাহান। বর্তমানে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার। গতকাল শনিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মইনুল ইসলামের আদালত শারমিন জাহানের তিন দিনের রিমান্ডও মঞ্জুর করেন।

এদিকে মহাপরিচালক আবুল কালাম বিদায় নিলেও রেখে গেছেন দুর্নীতির নানা কীর্তি। এসবের সঙ্গে তিনি একা জড়িত নন বলে জানান দুদক চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের পদস্থ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে একজন তৃতীয় শ্রেণির হিসাবরক্ষক আবজাল পর্যন্ত এর ডালপালা ছড়িয়েছে। ইতোমধ্যে দুদক ২৫ দফা সুপারিশ প্রথমে মন্ত্রণালয়কে পাঠিয়ে তা বাস্তবায়নের অনুরোধ জানিয়েছে। পরে আমাদের বার্ষিক প্রতিবেদনের মাধ্যমে তা রাষ্ট্রপতিকেও অবহিত করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছে, দেশে রয়েছে অসংখ্য সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল। অবকাঠামো আছে, যন্ত্রপাতি আছে, ওষুধ-পথ্যের সরবরাহ যাচ্ছে নিয়মিত। আছে চিকিৎসক, নার্স, আয়াসহ কর্মকর্তা-কর্মচারী। শুধু নেই কাঙিক্ষত চিকিৎসাসেবা। রাজধানী থেকে শুরু করে নিভৃত পল্লী পর্যন্ত সর্বত্রই অভিন্ন অবস্থা। চিকিৎসকের বদলে নার্স, ওয়ার্ডবয়, আয়াসহ দালালরা নানা কায়দা কৌশলে অসহায় রোগীদের কাছ থেকে অবৈধ উপায়ে হাতিয়ে নিচ্ছে অর্থ। ডাক্তার সেজে অপারেশন করছে ওয়ার্ডবয়। সংশ্লিষ্ট বিভাগের শীর্ষ পর্যায়ের প্রায় সবাই এসব জানেন। কিন্তু তেমন কোনো ব্যবস্থা নেন না।

এদিকে স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির ১১টি উৎস চিহ্নিত করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এগুলো বন্ধে ২৫ দফা সুপারিশও করে সংস্থাটি। কেনাকাটা, টেন্ডার, সেবা, নিয়োগ, বদলি, পদায়ন, ইকুইপমেন্ট ব্যবহার ও ওষুধ সরবরাহসহ বিভিন্ন খাতে কী ধরনের দুর্নীতি হয় তা তুলে ধরা হয়। চিহ্নিত উৎসগুলো দ্রুত বন্ধে তৈরি সুপারিশসহ একটি প্রতিবেদন রাষ্ট্রপতিকেও দিয়েছে দুদক। কিন্তু সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করেনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। দুদক যে ১৪টি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করেছিল তাদের কাজ দেয়াও বন্ধ হয়নি।

সংশ্লিষ্টরা বলছে, মহাপরিচালক আবুল কালাম বিদায় নিলেও রেখে গেছেন দুর্নীতির নানা কীর্তি। এসবের সঙ্গে তিনি একা জড়িত নন। মন্ত্রণালয়ের পদস্থ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে একজন তৃতীয় শ্রেণির হিসাবরক্ষক আবজাল পর্যন্ত এর ডালপালা ছড়িয়েছে। হাতেগোনা কয়েকজন দুর্নীতি থেকে দূরে থাকলেও সিস্টেমের কারণে তারাও আটকা পড়েছেন। দুদক গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে প্রতিবেদনটি রাষ্ট্রপতির কাছে দিয়েছে। প্রতিবেদনের আলোকে নীতিমালা তৈরির মাধ্যমে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা গড়ার উদ্যোগ নেয়া হলে জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হতো।

দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি নানা রকমের দুর্নীতি স্বাস্থ্যসেবাকে কলংকিত করছে। এ কলঙ্কের দাগ অনেকের গায়েই আছে। এতদিন এ দাগ বা ক্ষত কিছুটা আড়ালে থাকলেও করোনা তা সামনে নিয়ে এসেছে। তিনি বলেন, আমরা অনেক আগেই স্বাস্থ্য খাতকে ঢেলে সাজানোর সুপারিশ করেছিলাম। নিয়োগ ও বদলি থেকে শুরু করে কেনাকাটায় দুর্নীতি বন্ধ করা এমনকি একজন চিকিৎসকের কাছে জনগণ কী ধরনের সেবা পাবেন সেই কথাও বলেছি। আমাদের সুপারিশ প্রথমে মন্ত্রণালয়কে পাঠিয়ে তা বাস্তবায়নের অনুরোধ করেছি। পরে আমাদের বার্ষিক প্রতিবেদনের মাধ্যমে তা রাষ্ট্রপতিকেও অবহিত করেছি। দুদকের প্রতিবেদনে স্বাস্থ্য খাতের ১১টি দুর্নীতির উৎস চিহ্নিত করা হয়েছিল। এগুলো প্রতিরোধে ২৫ দফা সুপারিশও করা হয়। এতে বলা হয়, স্বাস্থ্য খাতের নিয়োগ, বদলি কেনাকাটাসহ এ সংক্রান্ত কাজে নীতিমালা মানা হয় না। স্বার্থান্বেষী মহল রয়েছে এর পেছনে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের আওতাধীন বিভিন্ন হাসপাতালে সংঘবদ্ধ একটি চক্র গড়ে উঠেছে। সমাজের এক শ্রেণির প্রভাবশালী ব্যক্তি যথাযথ সরঞ্জাম না থাকা সত্ত্বেও সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সহযোগিতায় ডায়াগনস্টিক সেন্টার স্থাপন করেছে। হাসপাতালগুলোতে সরকারি ওষুধ থাকার পরও তা রোগীদের দেয়া হয় না। পরে ওষুধ কালোবাজারে বিক্রি করে দেয়া হয়। দুর্নীতিটা এখানেই শেষ নয়, এ চুরির হিসাব রেজিস্ট্র্রারে মিলিয়ে রাখা হয়। বেআইনি প্রভাবে নিম্নমানের ও অপ্রয়োজনীয় চিকিৎসা যন্ত্রপাতি কেনা হয়। এছাড়া স্বাস্থ্য অধিদফতরের অধীন প্রকিউরমেন্টে যুক্ত সিএমএসডিতে বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি হচ্ছে। এসব দুর্নীতি ঠেকাতে ওষুধ ও মেডিকেল ইকুইপমেন্ট ক্রয়ে গঠিত কমিটিতে এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করে দুদক। দক্ষ জনবল না থাকলে ইকুইপমেন্ট না কেনার কথাও বলা হয় সুপারিশে। এতে ওষুধ ও মেডিকেল ইকুইপমেন্ট কেনার ক্ষেত্রে ইজিপিতে টেন্ডার আহ্বান এবং পিপিআরের বিধান নিশ্চিত করতে বলা হয়। হাসপাতাল পর্যায়ে যন্ত্রপাতি কেনাকাটা ও তা গ্রহণ করার বিষয়ে গঠিত কমিটিতে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ সংস্থার প্রতিনিধিদের রাখার প্রস্তাব করা হয়। তাদের মাধ্যমে সব কিছু নিশ্চিত হয়ে যন্ত্রপাতি কেনা ও গ্রহণ করার ব্যবস্থা করতে বলা হয়। অপ্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কিনে সরকারের কোটি কোটি টাকা নষ্ট না করতে বলা হয়। দুদকের সুপারিশে আরো বলা হয়, সব হাসপাতালে জরুরি হটলাইন, পরামর্শ ও অভিযোগ কেন্দ্র এবং যোগাযোগের সার্বক্ষণিক ব্যবস্থা রাখতে হবে।

হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য বিভাগের সব দফতর-অধিদফতরের সামনে সিটিজেন চার্টার রাখার কথা বলা হয়। এছাড়া প্রশাসনিক সুবিধার্থে স্বাস্থ্য অধিদফতর ভেঙে স্বাস্থ্যসেবা ও স্বাস্থ্য শিক্ষা নামে আলাদা দুটো অধিদফতরের প্রস্তাব দেয় দুদক। দুদক মনে করে অন্তত তাদের এ সুপারিশ খুলে দেখলে বা আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করলে দেশের মানুষ হয় তো কিছুটা হলেও বাড়তি সেবা পেত।

এ প্রসঙ্গে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, সংশ্লিষ্ট দফতর দুদকের সুপারিশ আমলে নেয়নি বলেই আমরা মনে করি। কারণ সে মেতাবেক তারা কোনো কাজ করেনি। কোনো উদ্যোগ নেয়নি। আমরা নীতিমালা করার কথা বলেছিলাম। কাজটি করা হলে অন্তত কিছুটা হলেও স্বস্তির জায়গা তৈরি হতো। তিনি জানান, দুদক থেকে করা সুপারিশ বাস্তবায়নের বিষয়ে তাগিদ দিয়ে আবারো মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে চিঠি দেয়া হবে। আমরা অনুরোধ করব, দুদক টিম দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করে দুর্নীতির উৎস চিহ্নিত করে প্রতিবেদনে যে সুপারিশ দিয়েছিল তা যেন বাস্তবায়নে নজর দেয় তারা।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এ বিষয়ে বলেন, মনে হচ্ছে দুদকের সুপারিশ স্বাস্থ্য বিভাগ বাস্তবায়ন করেনি। আর মন্ত্রণালয় এটা না করলে তা অনিয়ম ও দুর্নীতিকে সুরক্ষা দেয়ার শামিল। আমি মনে করি, স্বাস্থ্য বিভাগকে একটা সিস্টেমের মধ্যে নিয়ে আসতে এটি দুদকের একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ ছিল। এগুলো প্রতিরোধমূলক হলেও যৌক্তিকভাবেই সংশ্লিষ্টদের নজরে এনেছে। তবে এর ফলোআপও করা দরকার ছিল। সুপারিশ বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা। যেহেতু এ সুপারিশগুলো ছিল প্রতিরোধমূলক। কিন্তু প্রতিকার করার জন্য যে তথ্য ও অভিযোগ দুদকের হাতে আছে দুদক সে ব্যাপারে কতটুকু করতে পারছে, সে প্রশ্নও রয়েছে। দুদক এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা কি নিয়েছে জনগণকে জানানো উচিত। স্বাস্থ্যের একজন মহাপরিচালকের বিদায় বা নতুন মহাপরিচালক নিয়োগের মধ্যদিয়ে দুর্নীতি কমবে কিনা- এমন প্রশ্নে ইফতেখারুজ্জমান বলেন, মহাপরিচালক এককভাবে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করেন না। নতুন মহাপরিচালকের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ যেমন আছে। তেমনি সুযোগও আছে দুর্নীতিমুক্ত অধিদফতর গড়ে তোলার। পূর্বসূরিদের মতো দুর্নীতিকে প্রশ্রয় না দিয়ে কাজ করতে পারা হলো তার চ্যালেঞ্জ। আর সুযোগ হাতছাড়া হবে যদি তিনি কাজ করতে না পারেন। দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে না পারেন। এটা সরকার ও দেশবাসীর জন্য সুখকর হবে না।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, দেশের স্বাস্থ্য খাতের অব্যবস্থাপনা চরমে পৌঁছেছে। স্বাস্থ্য খাতে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে অন্য যে কোনো খাতের চেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিতে হবে। এক্ষেত্রে একটা কমিশন করতে হবে। যারা অর্থনীতিবিদ, আইনজীবী, সাংবাদিক ও চিকিৎসক সমাজের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত সময়ে রিপোর্ট প্রদান করবে। তার আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। এ করুণ অবস্থার জন্য স্বাস্থ্য খাতের দুর্বল ব্যবস্থাপনা ও সেবাহীন বাণিজ্যিক মানসিকতাকে দায়ী করেছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। সরকারি হাসপাতালে সুচিকিৎসা রীতিমতো ভাগ্যের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক হাসপাতালেই এক শয্যায় দু-তিনজন রোগীকে রাখা হচ্ছে। অন্যদিকে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় গড়ে ওঠা হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোর বিরুদ্ধে অবহেলা, ভুল চিকিৎসা আর পদে পদে রোগী হয়রানির রয়েছে হাজারও অভিযোগ।

বিশেষ করে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোয় রোগীদের কাছ থেকে মাত্রাতিরিক্ত ‘ফি’ আদায়ের পাগলা ঘোড়া থামানো যাচ্ছে না কোনোভাবেই। দিন দিন এমনকি ঘণ্টায় ঘণ্টায় পাল্টে যাচ্ছে চিকিৎসার খরচ। খেয়াল-খুশিমতো বাড়ানো হচ্ছে সেবা ফি। বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোয় নিয়ন্ত্রণহীন ‘সেবামূল্য’ আদায়ের কাছে রোগীরা জিম্মি।

এর সঙ্গে আছে, হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোতে নকল, ভেজাল বা নিম্নমানের ওষুধ ব্যবহারের নজির। কিছু অসাধু ক্লিনিক মালিক ও চিকিৎসক এসব ওষুধ বিপণনকারীদের প্রলোভনে পড়ে রোগীদের যা-তা ওষুধ লিখে দিচ্ছেন এবং রোগীরা উচ্চমূল্যের জঞ্জাল কিনে হচ্ছেন সর্বস্বান্ত। কারণ এসব নকল, ভেজাল ও নিষিদ্ধ ক্ষতিকর ওষুধ গ্রহণ করে তারা অসুস্থ হচ্ছেন। এমনকি বহু ক্ষেত্রে মারাও যাচ্ছেন অনেকে। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরে স্বচ্ছতার কাজটি এখন থেকে নতুনভাবে শুরু হতে পারে। নতুন মহাপরিচালক দুদকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে আহ্বান করতে পারেন, আপনারা এসে দেখুন। তদন্ত করুন। আমি সহযোহিতা করব। এক্ষেত্রে মহাপরিচালকের ওপর বাধা আসতে পারে। মন্ত্রণালয় তার ওপর নাখোশ হতে পারে। প্রভাবশালী মহল থেকে প্রভাব খাটানো হতে পারে। কিন্তু সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে যদি তাকে সাহস দেয়া হয়। দুর্নীতিমুক্ত অধিদফতর গড়ে তুলতে উৎসাহিত করা হয়, তা হবে দেশের জন্য বিরল দৃষ্টান্তের একটি কাজ।

এমন অবস্থায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যে স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালাচ্ছে, সেখান থেকেই বেরিয়ে আসছে নানা অনিয়মের প্রমাণ। প্রতারণার সাথে জড়িত বিপুলসংখ্যক প্রতিষ্ঠানের তালিকা ইতোমধ্যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী হাতে রয়েছে। ওই তালিকায় অনেক নামিদামি প্রতিষ্ঠানেরও নাম রয়েছে। ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে চলমান অভিযান অব্যাহত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। আর তাতেই চিকিৎসার নামে বছরের পর বছর ধরে প্রতারণা করে আসা স্বাস্থ্য খাতের রাঘববোয়ালরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। তারা র‌্যাবের অভিযান থামাতে নানামুখী চেষ্টা চালাচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে দেশে ৬৯টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পাশাপাশি ছোট-বড় মিলিয়ে ১৭ হাজার ২৪৪টি হাসপাতাল ও ক্লিনিক রয়েছে। ওসব প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশেরই লাইসেন্স নবায়ন করা নেই। অনেক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে গুরুতর অনিয়মেরও অভিযোগ রয়েছে। মূলত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি সিন্ডিকেটের সহায়তায় ওসব প্রতিষ্ঠানের মালিকরা বছরের পর বছর ধরে অনৈতিক কাজ করেও পার পেয়ে যাচ্ছে। করোনা মহামারীর সুযোগ কাজে লাগিয়ে এই চক্রটি আরো সক্রিয় হয়ে উঠে। এমন পরিস্থিতিতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী র‌্যাবের অভিযানে স্বাস্থ্য খাতে নানামুখী প্রতারণার নাটকীয় সব ঘটনা সামনে আসছে। দেশে করোনা সংক্রমণের পর নমুনা পরীক্ষা নিয়ে সরকারি হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক ভর করেছিল। একইভাবে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোও একের পর এক বন্ধ করে দেয়ার ঘটনা ঘটে। দুর্যোগময় ওই সময়ে প্রধানমন্ত্রী সরকারি চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য প্রণোদনা ঘোষণা করে মনোবল ফেরান। কিন্তু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো করোনার চিকিৎসা দূরের কথা, অন্য রোগে আক্রান্তদেরও চিকিৎসা সেবা দেয়নি। করোনা নেগেটিভ সনদ ছাড়া কোনো রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছিল না। এমন পরিস্থিতিতে হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ঘুরে ঘুরে পথেই অনেকের মৃত্যু হয়েছে। এমনকি উচ্চ আদালত থেকেও রোগী ভর্তির আদেশ দেয়া হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। আর জনবল সংকটের কারণে নমুনা পরীক্ষার পরিধি বাড়ানো যাচ্ছিল না। এমন পরিস্থিতিতে বেসরকারি দুটি প্রতিষ্ঠান করোনা নমুনা সংগ্রহের কাজে সহায়তা নামে এগিয়ে আসে। কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের সুবাদে শেষ পর্যন্ত তাদের ভয়ংকর প্রতারণার কথা প্রকাশ পায়। নমুনা সংগ্রহের নামে ভুয়া সনদ প্রদান ও চিকিৎসার নামে প্রতারণা করে তারা শুধু মানুষের জীবনকেই হুমকির মুখে ফেলে দেয়নি, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও তারা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে। এখন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের ঘটনায় অনিয়মে জড়িত বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক মালিকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

সূত্র জানায়, স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি ও প্রতারণার বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর পদক্ষেপকে সাধারণ মানুষ ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছে। এ অভিযান অব্যাহত রাখার পক্ষে ব্যাপক জনমতও তৈরি হয়েছে। সরকারের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও চলমান অভিযান আরো জোরালো করার পক্ষে মত দিয়েছেন। তাদের মতে, বছরের পর বছর ধরে বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবার নামে একটি চক্র সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে রেখেছে। করোনা পরিস্থিতি না এলে হয়তো এদের মুখোশ উন্মোচন হতো না। জেকেজি-রিজেন্ট হাসপাতালের মতো ভালো মানুষের মুখোশের আড়ালে থাকা অন্য প্রতারকদেরও বিচারের মুখোমুখি করা প্রয়োজন। কিন্তু এরই মধ্যে প্রভাবশালী একটি চক্র চলমান অভিযান থামানোর মরিয়া চেষ্টা শুরু করেছে। তারা সরকারের উচ্চ পর্যায়ে লবিং চালাচ্ছে। সম্প্রতি তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের পরিবর্তে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অভিযোগ ওঠা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়ে তদন্তের দাবি জানিয়েছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাদের সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে চলমান অভিযান অব্যাহত থাকবে।

সূত্র আরো জানায়, বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের মালিকরা চলমান অভিযানের মুখে তটস্থ। তারা অনুকম্পা চেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তার বাসভবনে সাক্ষাৎ করেন। বেসরকারি মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের ৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল হয়রানি বন্ধের দাবি জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সহায়তা চান। তারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তদন্ত করে প্রমাণসাপেক্ষে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের

বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার আহ্বান জানান। তাদের মতে, যদি কেউ অন্যায় করে তাকে একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তদন্তের মধ্য দিয়ে আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে। র‌্যাবের অভিযানের পর অনেক চিকিৎসক চাকরি থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেছে। তারা কাজ করতে অপারগতা প্রকাশ করেছে। স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সবকিছু যাতে নিয়মমাফিক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে করা হলে ভালো হয়। জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, অহেতুক কাউকে হয়রানি করা হবে না। কিন্তু অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেলে আইন অনুযায়ীই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এতে কেউ ছাড় পাবেন না।

এদিকে অভিযান প্রসঙ্গে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম জানান, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই অভিযান চালানো হচ্ছে। যখনই অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যাবে সঙ্গে সঙ্গে সেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এটিই সরকারের নির্দেশনা। সুতরাং যত বড় বা শক্তিশালী ব্যক্তিই হোক না কেন অন্যায় করে কেউ রেহাই পাবে না। এ অবস্থায় সবার প্রতি আহ্বান থাকবে, সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে চিকিৎসাসেবা পরিচালনা করুন।

অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে বেসরকারি মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মবিন খান জানান, যেভাবে অভিযান চালানো হচ্ছে তাতে রোগী এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মধ্যে ভীতি ছড়াচ্ছে। অনেক বড় বড় হাসপাতালের লাইসেন্স নবায়ন নেই। কিন্তু লাইসেন্স নবায়নের জন্য অনেকে টাকা জমা দিয়েছে। আবার অনেকে প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। করোনা মহামারীর এই সময়ে এসব বিষয় মাথায় রেখে কাজ করতে হবে।

আর চলমান অভিযান অব্যাহত থাকার কথা জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, যারা বা যেসব প্রতিষ্ঠান প্রতারণা ও অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছে, তারা কেউ ছাড় পাবে না। দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করেই এই অভিযান চলছে এবং ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে। জনস্বাস্থ্যের মতো স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে কেউ প্রতারণা করবে- সরকার তা হতে দিতে পারে না। সেক্ষেত্রে যত ক্ষমতাধর ব্যক্তিই হোক, কেউই কোনো ছাড় পাবে না।


© ২০২০ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developer: Tanveer Hossain Munna, Email : tanveerhmunna@gmail.com