আশীষ কুমার সেন
‘দেশে করোনাভাইরাস ( কেভিড-১৯) পরিস্থিতি দিন দিন ভয়ঙ্করের দিকে যাচ্ছে। মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ১১০। আক্রান্তের সংখ্যাও প্রথমের চেয়ে বাড়ছে কয়েক গুন।। মানুষকে ঘরে থাকার অনুরোধ জানিয়ে এবং লকডাউন করেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। পরিস্থিতির শুরু থেকেই সমন্বয়হীনতার অভিযোগ রয়েছে। অবস্থা সামাল দিতে সরকার সমন্বয়হীনতা কাটানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গত সোমবার প্রতি জেলায় একজন করে দেশের ৬৪ জেলায় ৬৪ সচিবকে সমন্বয়ের দায়িত্ব বন্টন করে দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের থাকা-খাওয়া, যাতায়াতসহ সব ধরনের সুবিধা নিশ্চিত করতে। জেলা শহরে অবস্থিত হোটেল ও আবাসিক ভবন রিকুইজিশন করতে। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের পিপিই, মাস্কসহ প্রয়োজনীয় সবকিছু সরবরাহ করতে। সার্বিক পরিস্থিতি মনিটরিং বা তদারকি করছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। কোথাও কোনো সমস্যা দেখা দিলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম সমন্বয়ের জন্য দেশের ৬৪ জেলায় ৬৪ জন সচিবকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। গত সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এ সংক্রান্ত অফিস আদেশ জারি করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস স্বাক্ষরিত আদেশে বলা হয়, নিয়োগকৃত কর্মকর্তারা জেলার সংসদ সদস্য, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার কাজ তত্ত্বাবধান করবেন। একই সঙ্গে ত্রাণ কার্যক্রম বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে অবহিত করবেন।
এছাড়া নিয়োগকৃত কর্মকর্তারা জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পরিবীক্ষণ ও প্রয়োজনীয় সমন্বয় সাধন করবেন। সমন্বয়ের মাধ্যমে পাওয়া সমস্যা সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগ বা সংস্থাকে লিখিত আকারে জানাবেন। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে অবহিত করবেন।
দায়িত্ব পাওয়া সচিবদের নামের তালিকাঃ করোনাভাইরাস প্রতিরোধ এবং এই পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে জেলা পর্যায়ে চলমান ত্রাণ কার্যক্রম সুসমন্বয়ের জন্য সরকার ৬৪ জেলায় সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দিয়েছে সরকার। এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হয়েছে। গত সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক আদেশে কর্মকর্তাদের মধ্যে দায়িত্ব ভাগ করে দেয়া হয়। এর আগে সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সে মাঠপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে জানান, চিকিৎসা সুরক্ষা সরঞ্জাম ও ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম নজরদারির জন্য ৬৪ জেলায় একেকজন সচিবকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারা সার্বিক বিষয়গুলো নজরদারি করে প্রধানমন্ত্রীকে রিপোর্ট করবেন।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস স্বাক্ষরিত আদেশে বলা হয়, নিয়োগ করা কর্মকর্তারা জেলার সংসদ সদস্য, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে পরামর্শ এবং প্রয়োজনীয় সমন্বয় করে কোভিবড-১৯ সংক্রান্ত স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা কাজ তত্ত্বাবধান ও পরিবীক্ষণ করবেন। এছাড়া তারা জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পরিবীক্ষণ ও প্রয়োজনীয় সমন্বয় করবেন। সমন্বয়ের মাধ্যমে পাওয়া সমস্যা/চ্যালেঞ্জ অথবা অন্য যেকোনো বিষয় সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ/দপ্তর/সংস্থাকে লিখিত জানাবে। পাশাপাশি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে নিয়মিত জানাবেন।
দায়িত্ব প্রাপ্ত সচিবরা যে সকল জেলায় দায়িত্ব পালন করবেন: চাঁদপুর জেলার দায়িত্ব পালন করবেন ত্রাণ সিনিয়র সচিব শাহ কামাল, মুন্সিগঞ্জ জেলায় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলাম, কুমিল্লা জেলার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এম জিয়াউল আলম, সিরাজগঞ্জ জেলায় অভ্যন্তরীন সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, টাঙ্গাইল জেলার ইসি সচিব আলমগীর, চট্টগ্রাম জেলার জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, নেয়াখালী জেলার পরিকল্পনা কমিশনের সিনিয়র সচিব বেগম শাহিন আহমেদ চৌধুরী, বাগেরহাটের দায়িত্ব বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মহিবুল হক, কঙ্বাজার জেলায় স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলাল উদ্দীন, শরীয়তপুর জেলায় জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিছুর রহমান, জয়পুরহাট জেলায় পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য সিনিয়র সচিব বেগম শামিমা নার্গিস, গোপালগঞ্জ জেলায় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার, রাঙ্গামাটি জেলায় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী, লক্ষীপুর জেলায় প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়ুয়া, রাজশাহী জেলায় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম, ময়মনসিংহ জেলায় বাংলাদেশ জ্বালানী ও বিদ্যুৎ গবেষণা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান সুবীর কিশোর চৌধুরী, নেত্রকোনায় ভূমি আপীল বোর্ডের চেয়ারম্যান উম্মুল হাছনা, খাগড়াছড়ি জেলায় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল্লাহ আল মোহসীন চৌধুরী, নাটোর জেলায় পরিসংখ্যান ও তথ্য বিভাগের সচিব সৌরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী, ঝিনাইদহ জেলায় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম, নওগা জেলায় পরিকল্পনা বিভাগের সচিব মো. নুরুল আমিন, মানিকগঞ্জ জেলায় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ার, মেহেরপুর জেলায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আকরাম-আল হোসেন, শেরপুর জেলায় অর্থ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার, বরিশাল জেলায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবদুল হালিম, ঝালকাঠি জেলায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নাসিরুজ্জামান, পটুয়াখালী জেলায় বাংলাদেশ পেটোলিয়াম কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান মো. সামছুর রহমান, কুড়িগ্রাম জেলায় পরিবেশ বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের সচিব জিয়াউল হাসান, পঞ্চগড় জেলায় ভূমি সচিব মো. মাকছুদুর রহমান পাটওয়ারী, ফরিদপুর জেলায় কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মুনশী শাহাবুদ্দীন আহমেদ, ঠাকুরগাঁও জেলায় বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের সচিব আবুল মুনসুর মো. ফয়েজ উল্লাহ, গাজীপুর জেলায় বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক সত্যব্রত সাহা, মাগুরা জেলায় মহিলা ও শিশুু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী রওশন আক্তারসহ সচিবরা দায়িত্ব পালন করবেন।
এদিকে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের নির্দেশনা পাওয়ার পর পরই জেলা শহরগুলোয় হোটেল রিকুইজিশনের কাজ শুরু করেছেন জেলা প্রশাসকরা। আবার কোনো কোনো জেলায় ডিসিরা আগে থেকেই হোটেল রিকুইজিশনের ব্যবস্থা করে রেখেছেন। সিভিল সার্জনদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে চিকিৎসক, নার্স ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পরিবহনের জন্য যানবাহন; রোগীদের জন্য অ্যাম্বুলেন্স; পর্যাপ্তসংখ্যক পিপিই, ওষুধ, ভেনটিলেটর ও লাশ পরিবহনের জন্য ব্যাগ প্রভৃতি প্রস্তুত রাখতে।
সরকারের এ উদ্যোগকে খুবই ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, দেরিতে হলেও এটি খুবই সময়োপযোগী হয়েছে। এটি একটি সঠিক ও ইতিবাচক সিদ্ধান্ত। আরও আগে নিলে ভালো হতো। তার পরও এখন যেহেতু নেওয়া হয়েছে সেহেতু আমি মনে করি, এটি খুবই কাজে আসবে।’ তিনি বলেন, সরকারের উচিত হবে তাদের দিকে বেশি নজর দেওয়া যারা কভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসার সঙ্গে সরাসরি জড়িত অর্থাৎ চিকিৎসক থেকে শুরু করে নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী এমনকি পরিচ্ছন্নতাকর্মী পর্যন্ত, তাদের প্রত্যেককে পিপিইসহ সব ধরনের ইকুইপমেন্ট সরবরাহ করতে হবে বেশি সংখ্যায় যাতে তারা কখনো আটকে না যান। তিনি আরও বলেন, ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রে আরও স্বচ্ছ হতে হবে। কেউ যেন না খেয়ে থাকে সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। ইফতেখারুজ্জামান মনে করেন, এ সংকট মোকাবিলায় সবচেয়ে কার্যকর হচ্ছে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা ও আইসোলেশনে থাকা। কিন্তু তা হচ্ছে না। এটা করতে না পারলে এ সমস্যা সহসা কেটে যাবে বলে মনে হয় না। পুরো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আগেই সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে করোনাভাইরাস নিয়ে দুই মাসের বেশি সময় ধরে চলে আসা সমন্বয়হীনতা দূর করার। শুরু থেকেই বিভিন্ন মহল থেকে বারবার বলা হচ্ছিল করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদফতর ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সরকারের অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সমন্বয়হীনতা রয়েছে। যার ফলে অনেক ক্ষেত্রেই ইতিবাচক ফল পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারের সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর গার্মেন্ট সেক্টরে যে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছিল তাতেও সমন্বয়হীনতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
গত দুই দিনে একাধিক নতুন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর অন্যতম হচ্ছে করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ও জেলা পর্যায়ে চলমান ত্রাণ কার্যক্রম সুসমন্বয়ের লক্ষ্যে সিনিয়র সচিব, সচিব এবং সচিব পদমর্যাদার ৬৪ কর্মকর্তাকে দায়িত্ব বণ্টন। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত একটি করে জেলার সামগ্রিক কার্যক্রম সমন্বয় করবেন। এ বিষয়ে গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস স্বাক্ষরিত অফিস আদেশ জারি হয়েছে।
আদেশে বলা হয়েছে, দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিবরা জেলার সংসদ সদস্য, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ ও প্রয়োজনীয় সমন্বয় সাধন করে কভিড-১৯-সংক্রান্ত স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার কাজ তত্ত্বাবধান ও পরিবীক্ষণ করবেন। জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পরিবীক্ষণ ও প্রয়োজনীয় সমন্বয় করতেও সচিবদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রাপ্ত সমস্যা/চ্যালেঞ্জ অথবা অন্যবিধ বিষয় সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দফতর, সংস্থাকে লিখিত আকারে জানাবেন এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে নিয়মিত অবহিত করবেন।
এদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ সারা দেশে রবিবার জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও সিভিল সার্জনদের চিঠি দিয়েছে কভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করার জন্য। চিঠিতে বলা হয়েছে, বিশেষভাবে উল্লেখ্য, স্বাস্থ্য সুরক্ষা তথা সঙ্গনিরোধ নিশ্চিতকরণের অনিবার্য প্রয়োজনে পারিবারিক সদস্যদের সঙ্গে নিজ বাসস্থানে অবস্থান করে চিকিৎসার কাজে নিয়োজিত থাকা সমীচীন হবে না। তাই তাদের জন্য সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ভিন্ন কোনো স্থানে অবস্থানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
এসব অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে কী করতে হবে সে বিষয়েও নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজন ও উপযোগিতা বিবেচনায় হোটেল বা ভবনের সংখ্যা নির্ধারণ করতে বলা হয়েছে। অধিগ্রহণ করা হোটেল বা ভবনের ইউটিলিটি বিল এবং সেখানে অবস্থানরতদের নির্ধারিত হারে খাওয়া খরচও সরকার বহন করবে। হোটেল বা ভবন কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় সহায়ক জনবল ও অন্যান্য সার্বিক সহযোগিতা দিতে হবে।
একই নির্দেশনায় জেলা সিভিল সার্জনদের বলা হয়েছে, করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য পৃথক হাসপাতাল বা কেন্দ্র; চিকিৎসক, নার্স ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পরিবহনের জন্য যানবাহন; রোগীদের জন্য অ্যাম্বুলেন্স; চিকিৎসক, নার্স ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জন্য পর্যাপ্তসংখ্যক পিপিই, ওষুধ ও ভেনটিলেটর এবং লাশ পরিবহনের জন্য ব্যাগ প্রভৃতি প্রস্তুত রাখা জরুরি। এ বিষয়ে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে সিভিল সার্জনকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতে বলা হয়েছে। এদিকে গতকাল পর্যন্ত বেশ কয়েকটি জেলায় হোটেল ও আবাসিক ভবন অধিগ্রহণের কাজ আংশিক হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের যুগ্মসচিব তপন কুমার বিশ্বাস। গতকাল তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ইতিমধ্যে সারা দেশে অন্তত ২০টি জেলার ডিসিদের সঙ্গে তার কথা হয়েছে। তারা জানিয়েছেন তারা আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। সরকারের নির্দেশনা পাওয়ার পর তাদের কাজ বেশ সহজ হয়ে যাবে।
অন্যদিকে ঢাকার জেলা প্রশাসক ব্যাপকভাবে তৎপরতা শুরু করেছেন বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে। সূত্রগুলো জানান, ঢাকায় সবচেয়ে বেশি হোটেল বা আবাসিক ভবনের প্রয়োজন হবে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে সহস্রাধিক চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীর একটি তালিকা জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হয়েছে যারা অধিগ্রহণকৃত হোটেলে বা ভবনে থাকবেন।