লক্ষ্মীপুরে ভূমিহীনদের কবরস্থান ও মসজিদের ফলক উন্মোচন করেন ড. বেনজীর আহমেদ

ভিবি নিউজ ডেস্ক: লক্ষ্মীপুর-রামগতি সড়কের পাশে সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউ নিয়নের পশ্চিম চরমনসা প্রামে বসবাসকারী নদীভাঙ্গা ভূমিহীন প্রায় ২ হাজার মানুষের জন্য কবরস্থান ও মসজিদের ফলক উন্মোচন এবং মতবিনিময় অনুষ্ঠান হয়। ৫ অক্টোবর দুপুরে কবরস্থান ও মসজিদের ফলক উন্মোচন করেন পুলিশের মহাপরিদর্শক ড.বেনজীর আহমেদ। পুলিশের উদ্যোগে জমি কিনে নিবন্ধন করার পরে ঐ জমিতে সীমানা প্রাচীর তুলে কবরস্থান ও মসজিদ নির্মাণ করা হয়। সেখানে গভীর নলকূপ ও মরদেহ ধোঁয়ারঘর রয়েছে। এতে প্রধান সড়ক থেকে কবরস্হানে যাওয়ার জন্য রাস্তাও সংস্কার করা হয়েছে। মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে ভূমিহীনদের কবরের জমির দলিল বুঝিয়ে দেয়া হয়।

পুলিশ সুপার ড. এএইচএম কামরুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অথিতি ছিলেন পুলিশের নারী কল্যাণ সমিতির (পুনাক) সভানেত্রী জীশান মির্জা।
এসময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম রেঞ্জ পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক আনোয়ার হোসেন ও অতিরিক্ত উপ মহাপরিদর্শক মো. সাইফুল ইসলামসহ লক্ষ্মীপুর জেলা পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা। লক্ষ্মীপুর জেলা পুলিশ সুপার ড.এএইচএম কামরুজ্জামান বলেন, সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের পশ্চিম চরমনসা প্রামে জমি কিনে কবরস্থানটি করা হয়েছে। সেখানে ১০ হাজার মৃত মানুষকে কবর দেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। মানবিক কারণে আইজিপির উদ্যোগে জেলা পুলিশ কাজটি বাস্তবায়ন করে।

জানা যায়, সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ হয়ে কমলগর উপজেলার তোরাবগঞ্জ এলাকা থেকে আলেকজান্ডার বাজার পর্যন্ত ৪৫ কিলোমিটার সড়কের দুপাশে কোনোমতে অস্থায়ী ঘর তুলে বেঁচে থাকার লড়াই করে যাচ্ছেন কয়েক হাজার অসহায় মানুষ। এদের বেশিরভাগই মেঘনা নদীর অব্যাহত ভাঙনের কারনে বাড়িঘর হারিয়েছেন। সড়কের পাশে ঘর তুলে বসবাস করতে পারলেও তাদের অন্যান্য চাাহিদা রয়ে গেছে ধরা ছোয়ার বাহিরে। এতে পরিবারের কোনো সদস্য মারা গেলে বিপাকে পড়তে হয় তাদের। নিজস্ব কোনো জায়গা ও কবরস্থান না থাকায় বাধ্য হয়েই যেখানে- সেখানে করতে হয় মরদেহ দাফন। এছাড়া মসজিদ না থাকায় অনেক দূরে গিয়ে অথবা ঘরে আদায় করতে হতো নামাজ।

নদী ভাঙা মানুষে কথা চিন্তা করে পুলিশের আইজিপি’র উদ্যোগে জেলা পুলিশ এসব সর্বহারা অসহায় মানুষদের জন্য গণকবর ও মসজিদ নির্মাণের জন্য কাজ বাস্তবায়ন করেছেন। নদী ভাঙনে নিঃস্ব হয়ে যাওয়া ২ হাজার পরিবার পুলিশের পক্ষ থেকে উপহারটি পাওয়ায় তারা খুশি।

স্থানীয়রা জানান, তাদের কাছে চিন্তার বিষয় মৃত মানুষের কবরের জায়গা না থাকা। মৃত্যুর পর অনেক সময় মরদেহ নিয়ে কয়েক ঘন্টা বসে থাকতে হয়। কোথায়, কার জমিতে মরদেহ দাফন করা যাবে, তা নিয়ে কাজ করে অস্থিরতা। কারো মৃত্যু হলে শুরু হয় এদিক-ওদিক ছোটাছুটি। এছাড়া নিজেদের কবরস্থানে অন্যের কবর দিতেও অনীহা জানান এলাকার অনেকে।

আরও জানা গেছে, পুলিশের আইজিপি’র উদ্যোগে লক্ষ্মীপুর জেলা পুলিশ সদর উপজেলার লাহারকান্দি ইউনিয়নের কুতুবপুর গ্রামের আবদুর কুদ্দুসের কাছ থেকে পশ্চিম চরমনসা গ্রামে সাড়ে ২৯ শতাংশ জমি কেনে। গত বছরের ১ ডিসেম্বর জমিটি নিবন্ধন করা হয়। এরপর থেকে পুরো জমিতে সীমানা প্রাচীর তুলে কবরস্থান ও মসজিদ নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়। সেখানে গভীর নলকূপ, মরদেহ ধোয়ার ঘর ও শৌচাগার রয়েছে। প্রধান সড়ক থেকে গণকবরে যাওয়ার জন্য রাস্তাও সংস্কার করা হয়।

সড়কের দুপাশে বসবাসকারী একাধিক ব্যক্তি বলেন, আমাদের সকলের বাড়ি রামগতি ও কমলনগর উপজেলায় ছিল। মেঘনার ভাঙনে তা নদীতে চলে গেছে। আমাদের মধ্যে কেউ মারা গেলে দাফনের জন্য মরদেহ নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়। কারণ মারা যাওয়ার পরে আমাদের দাফন করার জায়গা নেই। এখানে বসবাস করা প্রত্যেক মানুষের প্রায় একই সমস্যা। আগে স্থানীয়রা বাধা না দিলেও কয়েক বছর ধরে জমির দাম বাড়ার কারণে কেউ কবরের জন্য এক ইঞ্চি জমি দিতে রাজি হয় না।

ভবানীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল হাসান রনি বলেন, সড়কের দুপাশে বসবাসকারীরা নদী ভাঙনের শিকার। তারা সবাই এখন সহায়- সম্বলহীন। কোনোমতে অস্থায়ীভাবে তারা বসবাস করে জীবনযাপন করে আসছে। অসহায় এসব মানুষের জন্য কবরস্থান ও মসজিদ তৈরী করে দেয়ার পুলিশ বিভাগ প্রশংসার দাবিদার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *