সংবাদ শিরোনামঃ
লক্ষ্মীপুরে নবাগত পুলিশ সুপার কে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা প্রদান পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী স্বরণে মেহেদী হাসান রাসেলের কুরআন ও হাদিসের আলোকে উপস্থাপন  লক্ষ্মীপুরে নতুন পুলিশ সুপার আকতার হোসেন লক্ষ্মীপুরে যুবদল নেতা ইকবালের নেতৃত্বে সৌদি প্রবাসীর জমি দখল করে দেওয়ার অভিযোগ জনগনের সুস্বাস্থ্যের জন্য চাই নিরাপদ খাদ্য রায়পুরে  সন্ত্রাসী তান্ডব চালিয়ে লুটপাট ও মাছ ঘাট দখলের অভিযোগ লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার উপশহর দালাল বাজার ইউনিয়ন বিএনপির মাধ্যমে পানিবন্ধীদের ত্রান বিতরন পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের মাঠকর্মীদের নিয়োগবিধি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন “ লক্ষ্মীপুরে কলেজ অধ্যক্ষের অপসারণ চেয়ে শিক্ষক- কর্মচারীদের বিক্ষোভ বাংলাদেশের মুমূর্ষু শিশু শুভমকে নতুন জীবন দিয়েছেন ভারতের ডাঃ সঞ্জীব দেববর্মণ কোটা আন্দোলনে মৃত্যুর সংখ্যা সম্পর্কে এখন পর্যন্ত যা জানা যাচ্ছে লক্ষ্মীপুরে সরকারি ঔষধ ফার্মেসিতে! এযেন সর্ষের মধ্যে “ভুত “ লক্ষ্মীপুরে কিশোর অপরাধ প্রতিরোধে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত অবশেষে লক্ষ্মীপুরে বাল্য বিবাহ রোধে অগ্রনী ভূমিকা রাখলেন জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা জোবায়েদা খানম শিমুল সাহা, বাংলাদেশ যুব ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচিত
কমলনগরে মেঘনার ভয়াবহ ভাঙ্গণ, স্থায়ী বেড়ীবাঁধ নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন

কমলনগরে মেঘনার ভয়াবহ ভাঙ্গণ, স্থায়ী বেড়ীবাঁধ নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন

ভিবি নিউজ-লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার সাহেবেরহট ইউনিয়নের কাদির পণ্ডিতেরহাট এলাকায় মেঘনা নদীর ভয়াবহ ভাঙ্গণ দেখা দিয়েছে। ভাঙ্গণের তীব্রতায় মুহূর্তেই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে এলাকার বিস্তীর্ণ জনপদ।

এমন পরিস্থিতিতে ভাঙ্গণের হুমকিতে পড়েছে স্থানীয় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কমিউনিটি ক্লিনিক, ডিজিটাল ডাকঘর, মসজিদ ও কাদির পণ্ডিতেরহাট বাজার। ভাঙ্গণ প্রতিরোধে এখনই উদ্যোগ নেয়া না হলে চলতি মৌসুমে এগুলো নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। স্থায়ী বাঁধ না হলেও ভাঙ্গণের তীব্রতা কমাতে আপদকালীন বরাদ্দের আওতায় জিও ব্যাগের বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

স্বেচ্ছাসবী সংগঠনের মানববন্ধন:
উত্তাল মেঘনা নদীর কবল থেকে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর ও রামগতি উপজেলাকে রক্ষায় স্থায়ী বেড়ীবাঁধ নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন করা হয়েছে। ‘আদর্শ মানব কল্যাণ সংগঠন’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে ১১ জুলাই শনিবার দুপুরে কমলনগর উপজেলার নাছিরগঞ্জ বাজার সংলগ্ন মেঘনা নদীর তীরে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।

এতে স্থানীয় সমাজসেবক আবুল কাশেম হাওলাদার, ছাত্রনেতা রাকিব হোসেন সোহেল, আদর্শ মানব কল্যাণ সংগঠনের সভাপতি সোহেল হোসেন শাহীন, সহ-সভাপতি আবুল কাশেম সাদ্দাম, সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন নিরবসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
এসময় বক্তারা বলেন, নদীর তীব্র ভাঙনে কমলনগর ও রামগতি উপজেলার হাজারো পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে।

প্রায় ৭ লাখ মানুষ রয়েছে মহাসংকটে। তাই এ সংকট মোকাবেলায় অবিলম্বে এ অঞ্চলে স্থায়ী বেড়ীবাঁধ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবি জানান তারা।

সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, ২০১৬ সালে ভাঙ্গণের মুখে পড়ে কাদির পণ্ডিতেরহাট বাজারটি প্রায় দুই কিলোমিটার পূর্বে চরজগবন্ধু এলাকায় স্থানান্তরিত হয়। ভাঙ্গণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা নতুন করে দোকান ঘর নির্মাণ করে ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বপ্ন দেখেন।
কিন্তু তাদের সেই স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্নে পরিণত করেছে করালগ্রাসী রাক্ষসী মেঘনা। মাত্র ৪ বছরের ব্যবধানে মেঘনা নদীর ভাঙ্গণ এখন বাজারের ৩শ মিটারের মধ্যে চলে এসেছে। বাজারের পাশেই রয়েছে চরজগবন্ধু এটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আবু তাহের কমিউনিটি ক্লিনিক ও চরজগবন্ধু ডিজিটাল ডাকঘরসহ ৪টি মসজিদ। ভাঙ্গণের তীব্রতায় সেই সব প্রতিষ্ঠানগুলোও রয়েছে চরম ঝুঁকিতে।

স্থানীয়রা জানান, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের পর থেকে এলাকাটিতে ভাঙ্গণের তাণ্ডব চলছে। ভাঙ্গণের মুখে পড়ে বসতবাড়ি, রাস্তাঘাট ও ফসলি জমি মুহূর্তেই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। কয়েক দিনের ভাঙ্গণে রফিক মুহরী, আব্দুল মালেক, শাহ আলম ও শামছল হক বেপারীর বাড়িসহ অন্তত ১০টি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে এলাকার বাসিন্দাদের মাঝে এখন নদী ভাঙ্গণ আতঙ্ক বিরাজ করছে।

অলি বেপারী, মো. দুলাল ও মো. ইব্রাহীমসহ স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, মেঘনার ভাঙ্গণ বাড়ির কাছাকাছি চলে আসায় আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে তাদের। নিজেদের বসতভিটাসহ এলাকাটিকে রক্ষায় জরুরি ভিত্তিতে বাঁধ নির্মাণের দাবি জানান তারা।

কাদির পণ্ডিতেরহাট বাজারের ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন জানান, এক সময়ে কাদির পণ্ডিতেরহাট বাজার উপজেলার মধ্যে অন্যতম একটি বাণিজ্যিক কেন্দ্র ছিল। ৪ বছর আগে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ ওই বাজারের কয়েকশ’ দোকান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। পরে তারা বর্তমান জায়গায় বাজারটি স্থানান্তর করেন। কিন্তু এখন পুনরায় বাজারটি ভাঙ্গণে হুমকির মুখে পড়ায় তিনিসহ অপর ব্যবসায়ীরা খুবই আতঙ্কে রয়েছেন।

চরজগবন্ধু এটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আজাদ উদ্দিন জানান, ১৯৭২ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে পিছিয়ে পড়া এলাকায় শিক্ষা বিস্তারে অবদান রেখে আসছে।

একতলা দু’টি পাকা ও একটি টিনশেড ভবন বিশিষ্ট বিদ্যালয়টিতে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ৩৩০ জন। মেঘনার ভাঙ্গণে বিদ্যালয়ের ক্যাচমেন্ট এরিয়া দিন দিন বিলীন হয়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়ছে।

এখন মেঘনার ভাঙ্গণ বিদ্যালয়ের কাছাকাছি চলে আসায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ভাঙ্গণ থেকে বিদ্যালয়টি রক্ষা করা না গেলে কয়েকশ’ ছাত্র-ছাত্রীর শিক্ষা জীবন অনিশ্চিয়তার মধ্যে পড়ে যাবে।

বিদ্যালয়টির পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার মো. আবু তাহের বলেন, অনেক স্বপ্ন নিয়ে বাড়ির সামনে স্কুল, ক্লিনিক, ডাকঘর ও বাজার প্রতিষ্ঠা করেছি।

সামাজিক এ প্রতিষ্ঠানগুলো একই চত্বরে হওয়ায় খুব সুন্দর একটা সমাজ গড়ে ওঠেছে এখানে। কিন্তু করালগ্রাসী মেঘনার ভাঙ্গণরোধ করতে না পারলে আমাদের এ সুন্দর সমাজটুকু লণ্ডভণ্ড হয়ে যাবে।

সাহেবেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আবুল খায়ের জানান, গত ৬ মাসের মেঘনার ভাঙ্গণে কাদির পণ্ডিতেরহাট বাজার সংলগ্ন এলাকার ৪০টি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
এতে সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন শতাধিক পরিবার। ভাঙ্গণের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় বাজারসহ পুরো এলাকাটি এখন হুমকির মুখে। যে কারণে এলাকাটি রক্ষায় এ মুহূর্তে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা সম্ভব না হলেও ভাঙ্গণের তীব্রতা কমাতে আপদকালীন বরাদ্দের আওতায় জিও ব্যাগের বাঁধ নির্মাণের দাবি জানান তিনি।

লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফারুক আহমেদ জানান, মেঘনার ভাঙ্গণের তীব্রতা ঠেকাতে আপদকালীন বরাদ্দের আওতায় কমলনগর উপজেলার ৩টি স্পটে জিও টিউব ব্যাগে বাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে। কাদিরপণ্ডিতের হাট এলাকায় ভাঙ্গণ ঠেকাতে একই ভাবে বাঁধ নির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে সেখানে বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

স্থানীয় সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আবদুল মান্নান জানান, মেঘনার ভাঙ্গণরোধে কমলনগর ও রামগতি উপজেলার তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজের নতুন ডিপিপি অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। এছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড বর্তমানে ভাঙ্গণ ঠেকাতে আপদকালীন বরাদ্দে কমলনগর উপজেলার ৫টি স্পটে জিও টিউব ব্যাগে বাঁধ নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে। কাদির পণ্ডিতেরহাট এলাকায় জিও টিউব ব্যাগে বাঁধ চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।