সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেশির ভাগ সময়ই আরামে কাজ করে। এমন একটি বিশেষ পরিস্থিতিতেও অনেকে বাড়িতে অলস সময় কাটাচ্ছে। কিন্তু একাধিকবার নির্দেশনা দেয়ার পরও অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীই কর্মস্থল এলাকায় থাকার প্রয়োজন বোধ করেনি। এখন সরকার তাদের বিষয়ে কঠোর সিদ্ধান্ত নেবে। সেজন্য প্রতিটি উপজেলা থেকে ইউএনওরা জেলায় তালিকা পাঠাবেন, জেলা প্রশাসন তা বিভাগীয় কমিশনারদের মাধ্যমে ঢাকায় পাঠাবেন। ইতিমধ্যে মাঠ প্রশাসন থেকে অনুপস্থিত থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তালিকা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে আসা শুরু করেছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কর্মস্থলে অনুপস্থিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যে যে মন্ত্রণালয়ের অধীনে কর্মরত, ওই মন্ত্রণালয়গুলোকে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে।
সূত্র জানায়, দেশে বর্তমানে সব মিলিয়ে প্রায় ১৭ লাখের মতো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী আছে। করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবেলায় গত ২৬ মার্চ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ছুটি চলছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় আরো ছুটি ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। ছুটি চলাকালীন সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে তাদের কর্মস্থল এলাকায় থাকতে একাধিকবার আদেশ জারি করা হয়।
কিন্তু সরকারি নির্দেশ অমান্য করে যারা কর্মস্থল এলাকায় নেই তাদের জন্য এখন কঠোর শাস্তি অপেক্ষা করছে। তাদের বিভাগীয় মামলার মুখোমুখি হতে হবে। দোষী কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না।
সূত্র আরো জানায়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ইতিমধ্যে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে যারা কর্মস্থল এলাকায় উপস্থিত নেই তাদের তালিকা ঢাকায় পাঠাতে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) কড়া নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কারণ ইতিমধ্যে মাঠ প্রশাসন থেকে কর্তব্যকাজে অবহেলা সম্পর্কিত বেশ কিছু অভিযোগ প্রশাসনের উপরের মহলের কাছে এসেছে। ওই পরিপ্রেক্ষিতে কর্মস্থল এলাকায় অনুপস্থিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তালিকা পাঠানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কারণ দেশের জরুরির পরিস্থিতিতে সরকারের নির্দেশনা যদি বেতনভুক্ত লোকজনই না মানে তাহলে শাস্তির বিকল্প নেই। আর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে নির্দেশনা পাওয়ার পর এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এদিকে সাধারণ ছুটিতে কর্মস্থল এলাকায় উপস্থিত না থাকার বিষয়ে সরকারের কড়া অবস্থানের কারণে বিপাকে পড়েছে কর্মস্থল এলাকা ছেড়ে যাওয়া অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের অনেকে ভাবতেই পারেনি এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। অনেকে মনে করেছে করোনা প্রাদুর্ভাবের এ সাধারণ ছুটিতে তাদের বিভাগের তেমন কোনো কাজ নেই। সেজন্যই অনেকেই কর্মস্থল এলাকা ত্যাগ করে চলে গেছে। অবস্থা যে এমন হবে তা তারা অনুধাবন করতে পারেনি। কিন্তু এখন দেশের বিভিন্ন জেলা লকডাউনের কারণে এবং যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও তারা কর্মস্থলে পৌঁছাতে পারছে না। অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ইউসূফ হারুন বিভাগীয় কমিশনার এবং জেলা প্রশাসকদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে দেয়া এক নির্দেশনায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি জানান, অবিলম্বে কর্মস্থলে অনুপস্থিত এবং ত্রাণ বিতরণে দায়িত্বপ্রাপ্তদের গাফিলতি চিহ্নিত করে বিভাগীয় কমিশনারদের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। যেসব কর্মকর্তা এই দুর্যোগের সময় সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করবে না এবং নানা অজুহাতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকবে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।