সংবাদ শিরোনামঃ
লক্ষ্মীপুরে নবাগত পুলিশ সুপার কে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা প্রদান পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী স্বরণে মেহেদী হাসান রাসেলের কুরআন ও হাদিসের আলোকে উপস্থাপন  লক্ষ্মীপুরে নতুন পুলিশ সুপার আকতার হোসেন লক্ষ্মীপুরে যুবদল নেতা ইকবালের নেতৃত্বে সৌদি প্রবাসীর জমি দখল করে দেওয়ার অভিযোগ জনগনের সুস্বাস্থ্যের জন্য চাই নিরাপদ খাদ্য রায়পুরে  সন্ত্রাসী তান্ডব চালিয়ে লুটপাট ও মাছ ঘাট দখলের অভিযোগ লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার উপশহর দালাল বাজার ইউনিয়ন বিএনপির মাধ্যমে পানিবন্ধীদের ত্রান বিতরন পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের মাঠকর্মীদের নিয়োগবিধি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন “ লক্ষ্মীপুরে কলেজ অধ্যক্ষের অপসারণ চেয়ে শিক্ষক- কর্মচারীদের বিক্ষোভ বাংলাদেশের মুমূর্ষু শিশু শুভমকে নতুন জীবন দিয়েছেন ভারতের ডাঃ সঞ্জীব দেববর্মণ কোটা আন্দোলনে মৃত্যুর সংখ্যা সম্পর্কে এখন পর্যন্ত যা জানা যাচ্ছে লক্ষ্মীপুরে সরকারি ঔষধ ফার্মেসিতে! এযেন সর্ষের মধ্যে “ভুত “ লক্ষ্মীপুরে কিশোর অপরাধ প্রতিরোধে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত অবশেষে লক্ষ্মীপুরে বাল্য বিবাহ রোধে অগ্রনী ভূমিকা রাখলেন জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা জোবায়েদা খানম শিমুল সাহা, বাংলাদেশ যুব ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচিত
ভ্রমণকাহিনী শরতে_’ঠিকানা’র_নৌভ্রমণ   , কবি নাসরীণ জাহান রীণা 

ভ্রমণকাহিনী শরতে_’ঠিকানা’র_নৌভ্রমণ   , কবি নাসরীণ জাহান রীণা 

ভিবি নিউজ ডেস্ক:
 দিনটি ছিল শুক্রবার। আশ্বিনের ৯ তারিখ,বাংলা ১৪২৮ অব্দ। ষড়ঋতুর পরিক্রমায় শরৎরাণী সেজেছে  সুকোমল সুষমায়। এক ঝাঁক ভ্রমণপিপাসু অভিযাত্রী সাব্যস্ত করেছে শরতের এমন দিনে নৌ ভ্রমণের আনন্দটা  মোটেও হাত ছাড়া করা যায় না-যদি ঠিকানা ট্রাভেলার্স’র উদ্যোগে ঠিকানা ঠিক করা হয়। প্রতিবারের মতো এবারও ঠিকানা হাতে নিল ৫০ জনের একটি দলের নৌভ্রমণের সিদ্ধান্ত। ঋতুর রাজা বসন্ত হলেও শরৎ কিন্তু রাণী-এ কথা আমরা সবাই জানি। শরৎকালে প্রকৃতি সাজে রাণী’র সাজেই। বনে-বাগানে কাশফুল, শিউলিদের যেমন বিচরণ তেমন জলেও কিন্তু শাপলার শোভাবর্ধন। নীল আকাশ জুড়ে শুভ্র মেঘের মেলা বসেছে।
ভ্রমণের ইচ্ছেটাই টেনে নিয়ে গেছিল ভোর ছয়টায় লক্ষ্মীপুর থেকে বাসযোগে মহীপাল,ফেনীর উদ্দেশ্যে। আমরা কয়েকজন পৌঁছে গেছি স্থানীয়দের আগেই ‘ফারুক’হোটেলের সামনে। সেখানে ভ্রমণের জন্য নির্ধারিত বাস রাখা ছিল। লক্ষ্মীপুর থেকে ছেড়ে ‘ঝুমুর’ পর্যন্ত গিয়ে আমাদের বাসটি খারাপ হয়ে যাওয়াতে আমাদেরকে আবার অন্য বাসে উঠিয়ে দেয়া হয়। এতে আমাদের কিছুটা দেরী হলেও আমরা ফেনীর স্থানীয় অনেকের আগেই নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে যাই। ‘ঠিকানা ট্রাভেলার্স’র আয়োজকরা ইতিমধ্যে আমাদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। সবাই একে একে পরিচিত হই।
সকাল ৯ টায় ফেনী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে আমাদের বাস যাত্রা শুরু করে। বাসে যাত্রীরা সব হাসি-আনন্দে মেতে উঠে। পারস্পরিক খোঁজখবর নেয়া,সৌহার্দ্য বিনিময় করতে করতে কখন যে আমরা লেমুয়া বাজার পৌঁছে যাই টেরই পাইনি। বাস থেকে নেমে লেমুয়া ব্রিজের নিচে লেমুয়া ঘাটে রাখা আমাদের কাঙ্খিত সেই সজ্জিত নৌকায় উঠি। ঠিকানা’র সংগঠকরা একে একে ঘোষণা দেন, “মহিলারা ও বাচ্চারা আগে উঠবেন। পুরুষরা দয়া করে পরে উঠবেন। কেউ হুড়াহুড়ি না করে ধীরে-সুস্থে উঠবেন।” ইত্যাদি-ইত্যাদি। সে মতে সকলে মেনে চিনে নৌকায় উঠলাম।
২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১ইং শুক্রবার দিনটি রৌদ্রোজ্জ্বল ছিল। আমাদের নাও বিসমিল্লাহ বলে যাত্রা শুরু করলো। উপরে নীল আকাশ, পেঁজাতুলোর মত সাদা গুচ্ছ গুচ্ছ মেঘ। যেন নীল আঁচলে শুভ্র ফুলের বাহার। নদীর উপর ভাসছি আমরা। মাঝে মাঝে অনেকেই নদীর জলে হাত ভিজিয়ে নিচ্ছে। আমিও এটা কয়েকবার করেছি। অনেক আনন্দ হচ্ছে নৌকাতে। বিভিন্ন স্থান থেকে আগত কবি, সাহিত্যিক,শিক্ষক, সাংবাদিক, কণ্ঠশিল্পী, নাট্যকার,আইনজীবী, ব্যবসায়ী,গৃহিণী, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে মূখরিত ছিল এই নৌভ্রমণ। নৌকায় কবিতা,গান,গল্পে,আনন্দ-আড্ডায় মেতে উঠে সবাই। বাচ্চারাও ছড়া বলে, অনেক মজা করে। আমাদের নৌভ্রমণটা ছিল লেমুয়াঘাট থেকে সোনাগাজী মুহুরী সেচ প্রকল্প পর্যন্ত। এরই মাঝে নৌকায় নাস্তা সারা হয়। আকাশ, নদী, জলের মিতালি, দু’পাড়ের বিস্তীর্ণ মাঠ,সবুজ প্রকৃতি, দূরে ছোট ছোট ঘরবাড়ি সব মিলিয়ে এক অনুপম পরিবেশ। এদিকে নৌকায় যে প্রাণে প্রাণে বন্ধন সৃষ্টি হয়ে গেল এতসব উপেক্ষা করে সময় আমাদের নিয়ে এসেছে গন্তব্যে। আমাদের এই প্রাণোচ্ছাসকে আরো একটু দীর্ঘায়িত করার তোয়াক্কাই করলো না দোষী সময়। নৌকা থেকে নেমে আমরা আরো বিস্মিত হলাম। গাছের ছায়ায় সুনিবিড় পরিবেশ। রাধাচূড়া, শিউলি, হিমঝুরি,মিনঝিরি আরো নানান ফুলে সজ্জিত বাগান। বড় ব্রিজের নিচে সাতটি খোলা কপাট দিয়ে সজোরে পানি বইছে বঙ্গোপসাগরের দিকে। মুহুরী নদী তার অতিরিক্ত বন্যার পানি ঢেলে দিচ্ছে বঙ্গোপসাগরে। ওমা! খানিক বাদে দেখি উল্টো বইছে। জোয়ার আসায় কপাটগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। এবার সাগরের পানি চুইয়ে কপাটের ফাঁক গলে নদীতে পড়ছে। জেলেরা মাছ ধরছে। শুনেছি এখানে ইলিশ ধরা পড়ে অনেক। আরেকটি আকর্ষণ ছিল দেশের সর্ব প্রথম বায়োবিদ্যুৎ প্ল্যান্ট।
কিছুক্ষণ ঘোরাফেরার পর সকলে জুমা’র নামায আদায় করে সেখানকারই মসজিদে। তারপর দূপুরের খাবার খায়। টাটকা ইলিশ ভাজা,মুরগির রোস্ট আর মহিষের দধি’র স্বাদ মুখে লেগে আছে যেন। সামান্য বিশ্রামের পর শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। কবিতা গান লাফা খেলায় জমজমাট হয়ে উঠে অনুষ্ঠান। কেউ কেউ  ধাঁধাঁ রেখে যায় পরে উত্তর দেয়ার জন্য। এদিকে প্রচণ্ড গরমে প্রাণ ওষ্ঠাগত। অনেকেই হাশপাশ শুরু করে।
সাংবাদিক গাজী হানিফ’র লেবুর শরবত,কবি সাইরাস চৌধুরী ভাইয়ের ডাবের পানি, সাংবাদিক জহিরুল ইসলাম জাহাঙ্গীর’র মহিষের দধিতে কিছুটা তৃপ্ত হলেও ৪২° সেলসিয়াস তাপমাত্রা চামড়া পুড়িয়ে, ঘামে গতর ভিজিয়ে দিচ্ছিলো।
তবু গরমের যন্ত্রণা, দীর্ঘ সময় ধরে করোনা’র করালগ্রাস সকলকিছুই মুছে দিয়েছিল ভ্রমণের আনন্দ।
কবি ও সংগঠক সাইরাস চৌধুরী, কবি ও প্রকাশক হেলাল শাহাদাত, কবি ফরিদা আখতার মায়া,নাট্যকার ইসহাক চৌধুরী, সংগঠক ও নাট্যকার এফ.আই.ফিরোজী, সাংবাদিক ও সম্পাদক জসীম মাহমুদ, সংগঠক ও সাংবাদিক আরিফুর রহমান, সংগঠক ও সাংবাদিক তোফায়েল ইসলাম মিলন,সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব জহিরুল জাহাঙ্গীর, কণ্ঠশিল্পী কণা,কবি ও কণ্ঠশিল্পী নাসরীণ জাহান রীণা, সাংবাদিক ও কবি আতোয়ার মনির’র পরিবেশনা এবং উপস্থাপনা সকলের মনে আনন্দের সঞ্চার করেছে।
শেষবিকেলে স্নিগ্ধ পরিবেশে আবার যখন নৌকা ফেরার উদ্দেশ্যে ভাসলো তখন আরো ভালো লাগলো। মৃদুমন্দ সমীরণ আর ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি এতক্ষণের তপ্তপ্রাণগুলোকে একটু সস্তি দিল। এরই মাঝে সকলের নজরে পড়লো ‘রংধনু ‘। বাহ্! ভ্রমণে যেন আরো একটি নতুন মাত্রা যোগ হলো। আলতোভাবে হেলেদুলে নৌকা এগিয়ে যেতে থাকলো। যাত্রীদের মাঝে আবার উপভোগের তোড়জোড়। তবে এবার চঞ্চলতা ছেড়ে পেলবতায় জমে উঠল নৌকা। ভাটিয়ালি, আধ্যাত্মিক,লোকগান,লালনগীতি আর ওপারকে স্মরণ  করে গান হলো এবার। নদীতীরের মহিষের বাতান নজর কাড়লো সবার। অনেকেই ক্যামেরাবন্দী করলো সুন্দর দৃশ্যগুলো। এদিকে নদীর জল স্পর্শ করতে গিয়ে আমার ছেলে নাবিলের চশমাটা নদীতে পড়ে গেল। তাতে অবশ্য দুঃখ নেই। এটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে মানসপটে।
নৌকা এগুচ্ছে ঠাণ্ডা মেজাজে। মাঝে মাঝে ধার ঘেঁষে কিংবা কিছুদূর দিয়ে চলে যাচ্ছে প্রতিবেশী নৌকা। তারা আমাদের আনন্দ, হৈ-হুল্লোড় দেখছে। দেখে আবার নিজেরাও হৈ হৈ করে আমাদের সাথে যোগ দিচ্ছে। নৌকায় কেউ কেউ নামাযও আদায় করছে। আস্তে আস্তে সূর্য পাটে নামলো। অন্ধকার হয়ে আসছে। হঠাৎ আমার নজরে পড়লো একপাড়ে ঘন জঙ্গলে অনেকগুলো ছোট্ট ছোট্ট আলোর উৎস। মিটমিট করে জ্বলছে। বুঝতে পারলাম জোনাকি পোকা। আমি এর আগে আর এতগুলো জোনাকি একত্রে দেখিনি। যাকিছু ই দেখছি কেবল বিমোহিত হচ্ছি। আজকের এই শরতের নৌভ্রমণে আনন্দ যেন কাণায় কাণায় পূর্ণ।
আমাদের নৌকা ইতিমধ্যে লেমুয়া ঘাট পৌঁছে গেল। সেখান থেকে আবার বাসে যে যার বাড়ি ফিরলো। কিন্তু   মন পড়ে রইলো মুহুরী নদীতে, সেচ প্রকল্পের আশপাশের মনোহরা নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমিতে।  আমার মত সবকটি প্রাণেরই হয়তো নিজ ঠিকানায় ফিরতে ইচ্ছে করছিল না। তবু ফিরতেতো হবেই। নৌ-ভ্রমণের এই দিনটি স্মরণে থাকবে অনেকদিন।
              ‌________ সমাপ্ত ________