সংবাদ শিরোনামঃ
লক্ষ্মীপুরে মোজাম্মেল হায়দার মাসুম ভূঁইয়া মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার ২০ মাসের কিছু কথা Good-humored, modern tasteful, tidy, elegant easy manner, worker friendly, giving strong political leadership General Secretary of Laxmipur District Awami League, MP of Laxmipur 2 Constituency Nooruddin Chowdhury Nayan greetings and congratulations in advance saradia Durga-Puja. Vashkar Basu Roy Chowdhury, Kaman Khola Zamindar House Puja Mandap. Headquarters, Lakshmipur লক্ষ্মীপুরে কমান্ডো স্টাইলে প্রবাসীর বাউন্ডারি -প্রাচির’ ভাংচুর ও লুটপাট ? লক্ষ্মীপুরে সাংবাদিকে হেনস্তাকারি দিপন কারাগারে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতিতে স্কুলে যাওয়ার পথে ছাত্রীকে অপহরণ মামলার মূল হোতা সাগর সহ চারজন গ্রেপ্তার লক্ষ্মীপুর সাংবাদিক ইউনিয়নের পরিচিতি সভায় প্রধান অতিথি এমপি নুরউদ্দিন চৌধুরী রামগতিতে জোড়া খুনের মামলার আসামী গ্রেপ্তার লক্ষ্মীপুর কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ননী গোপাল ঘোষ ও অধ্যাপক শ্রীমতি আরতি ঘোষের সাথে ছাত্র নুরউদ্দিনের স্বাক্ষাত প্রকৌশলী খোকন পালের বাবার পারলৌকিক ক্রিয়া অনুষ্ঠানে লক্ষ্মীপুর ২ আসনের এমপি এড: নুরউদ্দিন চৌধুরীর অংশগ্রহণ লক্ষ্মীপুরে শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী ২০২৩ এর উদ্বোধক জেলাপ্রশাসক সুরাইয়া জাহান পরিবেশ রক্ষায় গাছ প্রয়োজন, ভি বি রায় চৌধুরী লক্ষ্মীপুরের রামগতি থানা পুলিশ পরিদর্শক আলমগীর হোসেনের জেলা পুলিশ কর্তৃক বদলীজনিত বিদায় সংবর্ধনা পাওনা টাকা চাইতে তেড়ে এসে হুমকি-দমকি থানায় অভিযোগ লক্ষ্মীপুরে আলিফ -মীম হাসপাতালের অফিস রুম অনাড়ম্বর আয়োজনের মধ্যে দিয়ে ফিতা কেটে উদ্বোধন করেন প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আমির হোসেন ঔষধ কোম্পানি গুলো মেয়াদ উত্তীর্ণ ঔষধ ফেরত নিতে গড়িমসি করায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ভোক্তারা
পদ্মা সেতুতে বিশ্ব রেকর্ড গড়লেন শেখ হাসিনা ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হলো বাংলাদেশ

পদ্মা সেতুতে বিশ্ব রেকর্ড গড়লেন শেখ হাসিনা ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হলো বাংলাদেশ

বিশেষ প্রতিনিধি

পদ্মা সেতুর মূল অবকাঠামো নির্মাণের ৫ বছর পূর্তির দুই দিন আগে খুঁটির ওপর বসল সর্বশেষ ৪১তম স্প্যান। বহুল কাঙ্ক্ষিত এই স্প্যান বসার মধ্য দিয়ে সেতুর মূল অবকাঠামো শতভাগ দৃশ্যমান হলো। বাস্তবে ধরা দিল দীর্ঘদিনের এক স্বপ্ন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মাওয়া প্রান্তে ১২ ও ১৩ নম্বর খুঁটির ওপর সর্বশেষ ৪১তম স্প্যানটি বসানোর কাজ শুরু হয়। দুপুর ১২টার দিকে শেষ হয় কাজ। এই দৃশ্য প্রচার করা হয় টেলিভিশন, অনলাইন সংবাদ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে। ঐতিহাসিক এই মুহূর্তের সাক্ষী হয়েছে বাংলাদেশ, পুরো বিশ্ব। ৪১তম ও শেষ স্প্যানটি বসানোর মাধ্যমে দৃশ্যমান হয়েছে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু। ৪১তম স্প্যানের জোড়া লাগানোর মাধ্যমে পদ্মার দুই পাড়ও যুক্ত হয়ে গেছে।

পদ্মা সেতুতে শেষ স্প্যানটি বসানোর ফলে দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। এ স্প্যান বসানোর কারণে দৃশ্যমান হয়েছে সেতুর মূল কাঠামো। সরকার আগামী বছরের ডিসেম্বরে সেতুটি চালু করার ঘোষণা দিয়েছে। পদ্মার মূল সেতু, অর্থাৎ নদীর অংশের দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। অবশ্য দুই পাড়ে আরো প্রায় চার কিলোমিটার সেতু আগেই নির্মাণ হয়ে গেছে।

পদ্মা সেতুর প্রথম স্প্যানটি খুঁটির ওপর বসেছিল ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর। পদ্মার মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি)। আর নদীশাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো কর্পোরেশন। এ বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো। সেতুর মূল কাঠামোটা স্টিলের, যা স্প্যান হিসেবে পরিচিত। খুঁটি ও যানবাহন চলাচলের পথ কংক্রিটের।

১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের এ স্প্যানটি স্থাপিত হওয়ার মধ্য দিয়ে মিলিত হলো প্রমত্ত পদ্মার দুই তীর। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২৯ জেলার সঙ্গে সারাদেশের সরাসরি সংযোগ স্থাপিত হওয়ার পথও এখন উন্মুক্ত হওয়ার পথে। আগামী বছরে অর্থাৎ আর ১০ থেকে ১১ মাসের মধ্যেই এই সেতু যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে বলে সমপ্রতি জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। মূল সেতুর প্রকল্প ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আবদুল কাদের জানান, দুপুর ১২টা ২ মিনিটে ৪১তম স্প্যানের জোড়া লাগানোর মাধ্যমে পদ্মার দুই পাড় যুক্ত হয়েছে। এর আগে বাংলাদেশ ও চীনের পতাকায় সজ্জিত স্প্যানটি কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডের স্টক জেটি থেকে ক্রেনবাহী জাহাজ ‘তিয়ান-ই’তে করে নেয়া হয় দুই পিলারের কাছে। ২০০১ সালের ৪ জুলাই পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর প্রায় সাত বছর কাজ এগোয়নি। স্থান নির্ধারণের পর অর্থায়ন জটিলতায় যায় আরো পাঁচ বছর। কথিত দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংক সরে যাওয়ার পর নিজস্ব অর্থায়নে ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর সেতু অবকাঠামো নির্মাণ শুরু হয়। ঠিক পাঁচ বছর পর সবকটি স্প্যান বসানোর মাধ্যমে ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু পুরোপুরি দৃশ্যমান হলো।

পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়ান মো. আব্দুর কাদের জানান, এরপর দ্বিতল এই সেতুর ঢালাইয়ের কাজ, অ্যাপ্রোচ রোড ও ভায়াডাক্ট প্রস্তুত করা, রেলের জন্য সস্ন্যাব বসানো হয়ে গেলেই স্বপ্নের পদ্মা সেতু যানবাহন চলাচলের উপযোগী হবে।

এই মাহেন্দ্রক্ষণ ঘিরে পদ্মা পাড়ে ছিল উৎসবের আমেজ। কেবল পদ্মার দুই তীরের বাসিন্দারা নন, ঢাকা থেকেও অনেকে আসেন সেতুর শেষ স্প্যানটি বসানোর কাজ নিজে চোখে দেখতে। নৌকা, ট্রলার ও স্পিডবোট ভাড়া করে তারা নদীতে কাছাকাছি জায়গায় অবস্থান নেন। শেষ স্প্যানটি বসানো হয়ে গেলে উল্লাস প্রকাশ করেন তারা।

নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান মো. আব্দুর কাদের জানান, গত শুক্রবার পদ্মা সেতুর ৪০তম স্প্যান স্থাপনের মধ্য দিয়ে ছয় কিলোমিটার দৃশ্যমান হয়। ৪১তম স্প্যানটি বসাতে বুধবারই সব প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়। ৩২০০ টন ওজনের ১৫০ মিটার দীর্ঘ স্প্যানটি মাওয়ার কুমারভোগের কন্সট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে নিয়ে ১২ ও ১৩ নম্বর খুঁটির কাছে পৌঁছে যায় ভাসমান ক্রেইন ‘তিয়ান ই’। আজ (বৃহস্পতিবার) সকাল ৯টায় হালকা কুয়াশার মধ্যেই ইঞ্চি মেপে শুরু হয় স্প্যান স্থাপনের কাজ। বেলা ১২টা ২ মিনিটে সেই কাজ শেষ হলেই মুন্সিগঞ্জের মাওয়া থেকে শরীয়তপুরের জাজিরা পর্যন্ত পদ্মার এপার-ওপার যুক্ত হয়ে যায় বলে জানান নির্বাহী প্রকৌশলী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে মূল সেতুর নির্মাণ ও নদী শাসন কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এরপর ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে বসানো হয় প্রথম স্প্যান। মোট ৪২টি পিলারে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪১টি স্প্যান বসিয়ে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুর মূল কাঠামো তৈরি হয়। কিন্তু মাঝে ২২টি খুঁটির নিচে নরম মাটি পাওয়া গেলে নকশা সংশোধনের প্রয়োজন হয়। পরে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নকশা সংশোধন করে পাইল বাড়িয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত দেয়। তাতে বাড়তি সময় লেগে যায় প্রায় এক বছর। এরপর করোনাভাইরাস মহামারী আর বন্যার মধ্যে কাজের গতি কমে যায়। সব বাধা পেরিয়ে অক্টোবরে বসানো হয় ৩২তম স্প্যান। এরপর বাকি স্প্যানগুলো বসানো হয়ে যায় অল্প সময়ের মধ্যেই। মূল সেতু নির্মাণের কাজটি করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদীশাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি কোম্পানি সিনোহাইড্রো কর্পোরেশন। দুটি সংযোগ সড়ক ও অবকাঠামো নির্মাণ করেছে বাংলাদেশের আবদুল মোমেন লিমিটেড। সিনোহাইড্রো কর্পোরেশনই পদ্মা সেতুর জন্য নদী শাসনের কাজ করছে।

প্রকল্প সূত্র বলছে, বিশ্ব রেকর্ডের সংখ্যা তিনটি। প্রথমটি সেতুর পাইলিং নিয়ে। পদ্মা সেতুর খুঁটির নিচে সর্বোচ্চ ১২২ মিটার গভীরে স্টিলের পাইল বসানো হয়েছে। এসব পাইল তিন মিটার ব্যাসার্ধের। বিশ্বে এখনো পর্যন্ত কোনো সেতুর জন্য এত গভীরে পাইলিং প্রয়োজন হয়নি এবং মোটা পাইল বসানো হয়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা। দ্বিতীয় রেকর্ড হলো, ভূমিকম্পের বিয়ারিংসংক্রান্ত। এই সেতুতে ‘ফ্রিকশন পেন্ডুলাম বিয়ারিংয়ের’ সক্ষমতা হচ্ছে ১০ হাজার টন। এখন পর্যন্ত কোনো সেতুতে এমন সক্ষমতার বিয়ারিং লাগানো হয়নি। রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পে টিকে থাকার মতো করে পদ্মা সেতু নির্মাণ হচ্ছে। তৃতীয় রেকর্ড নদীশাসনসংক্রান্ত। নদীশাসনে চীনের ঠিকাদার সিনোহাইড্রো কর্পোরেশনের সঙ্গে ১১০ কোটি মার্কিন ডলারের চুক্তি হয়েছে। এর আগে নদীশাসনে এককভাবে এত বড় দরপত্র আর হয়নি। এ ছাড়া পদ্মা সেতুতে পাইলিং ও খুঁটির কিছু অংশে অতি মিহি (মাইক্রোফাইন) সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে। এসব সিমেন্ট অস্ট্রেলিয়া থেকে আনা হয়েছে। এ ধরনের অতি মিহি সিমেন্ট সাধারণত ব্যবহার করা হয় না বলে জানিয়েছেন সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা। চলতে পারবে ৫ তলার সমান উচ্চতার নৌযান। পদ্মা সেতুর নদীতে থাকা ৪০টি পিলারের নিচের পাইল ইস্পাতের। আর ডাঙার দুটি পিলারের পাইল কংক্রিটের। নদীতে যেসব পাইল বসানো হয়েছে, সেগুলো তিন মিটার ব্যাসার্ধের ইস্পাতের বড় বড় পাইপ, যার ভেতরটা ফাঁপা। ২২টি পিলারের নিচে ইস্পাতের এমন ৬টি করে পাইল বসানো হয়েছে। বাকি ২২টিতে বসানো হয়েছে ৭টি করে পাইল। আর ডাঙার দুটি পিলারের নিচের পাইল আছে ৩২টি, যা গর্তের মধ্যে রড-কংক্রিটের ঢালাইয়ের মাধ্যমে হয়েছে। নদীর পানি থেকে প্রায় ১৮ মিটার উঁচু পদ্মা সেতুর তলা। পানির উচ্চতা যতই বাড়ুক না কেন, এর নিচ দিয়ে পাঁচতলার সমান উচ্চতার যেকোনো নৌযান সহজেই চলাচল করতে পারবে।

উচ্চতা সমান কেন? পদ্মা সেতুটির মূল কাঠামোর উচ্চতা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রায় সমান। এর মূল কারণ, সেতুর ভেতর দিয়ে রেললাইন আছে। সড়ক ও রেললাইন একসঙ্গে থাকলে সেতু সাধারণত সমান হয়। না হলে ট্রেন চলাচল কঠিন হয়ে পড়ে। প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, পদ্মা নদীর পানির প্রবাহ পরিবর্তন হয়। কখনো মাওয়া প্রান্তে, কখনো জাজিরা প্রান্তে সরে যায়। আবার মাঝখান দিয়েও স্রোত প্রবাহিত হয়। এ জন্য নৌযান চলাচলের পথ সব স্থানেই সমান উচ্চতায় রাখার চেষ্টা রয়েছে সেতুটিতে।

এবিষয় আশা প্রকাশ করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম পদ্মা সেতুর শেষ স্প্যান বসার কথা তুলে ধরে বলেন, পদ্মা সেতু এখন বাস্তব। ২০২২ সালের জুনের মধ্যে এই সেতু খুলে দেয়া হবে। নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আমি আট বছর সেতু বিভাগের সচিব ছিলাম। ফলে আমি এখনো এর দেখাশোনা করে থাকি।

এবিষয় সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ ও বিচক্ষণ নেতৃত্বে শত বাধা অতিক্রম করে পদ্মা সেতু আজ দৃশ্যমান। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী নেতৃত্বই এই অসম্ভবকে সম্ভব করে বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছে- আমরাও পারি। ওবায়দুল কাদের বলেন, বিশ্বকে অবাক করে দিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ স্বপ্নের পদ্মা সেতুর সর্বশেষ স্প্যান আজ দুপুর ১২টা ২ মিনিটে বসানো হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ ও বিচক্ষণ নেতৃত্বে শত বাধা অতিক্রম করে পদ্মা সেতু আজ দৃশ্যমান।

নৌপরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু নির্মাণের মাধ্যমে সব ষড়যন্ত্রের জবাব দিয়েছেন। সমগ্র দেশবাসী পদ্মা সেতু নির্মাণকাজের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ। প্রধানমন্ত্রী আমাদের আলোকবর্তিকা। প্রতিমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব ষড়যন্ত্রের জবাব দিয়েছেন। সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে বিশ্বে বাংলাদেশকে মর্যাদার আসনে বসিয়েছেন। সমগ্র বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। পদ্মা সেতুর সর্বশেষ (৪১তম) স্প্যান বসানোর এ অনুভূতি প্রকাশ করার মতো নয়। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর, চার লেন-ছয় লেনের মহাসড়ক, মেট্রো রেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করছেন। বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণের মাধ্যমে উত্তরবঙ্গকে মূল ভূখ-ের সঙ্গে যুক্ত করেছেন। পদ্মা সেতু নির্মাণের মাধ্যম দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলাকে সরাসরি সড়ক নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসছেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রকল্প প্রস্তুতির সাথে যুক্ত কিছু লোকের দুর্নীতির অভিযোগ উঠায় বিশ্বব্যাংক তার প্রতিশ্রুতি প্রত্যাহার করে নেয় এবং অন্যান্য দাতারা সেটি অনুসরণ করে। যাইহোক, দুর্নীতি অভিযোগ পরবর্তীতে মিথ্যা প্রমাণিত হয় এবং কোনো প্রমাণ না পাওয়ায় কানাডিয়ান আদালত পরবর্তীতে মামলাটি বাতিল করে দেয়। বর্তমানে প্রকল্পটি বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব সম্পদ থেকে অর্থায়ন করা হচ্ছে। অঊঈঙগ এর ডিজাইনে পদ্মা নদীর উপর বহুমুখী আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্প পদ্মা বহুমুখী সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল ২০১১ সালে এবং শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৩ সালে। মূল প্রকল্পের পরিকল্পনা করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০৭ সালের ২৮ আগস্ট ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকার বহুল আলোচিত পদ্মা সেতু প্রকল্প পাস করেছিল। পরে আওয়ামী লীগ সরকার এসে রেলপথ সংযুক্ত করে ২০১১ সালের ১১ জানুয়ারি প্রথম দফায় সেতুর ব্যয় সংশোধন করে। তখন এর ব্যয় ধরা হয়েছিল ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মূল পদ্মা সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল ১২ হাজার ১৩৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এটি নির্মাণ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি। নভেম্বর পর্যন্ত সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১০ হাজার ৭২৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এ হিসাবে আর্থিক অগ্রগতি ৮৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। যদিও সেতু নির্মাণে বাস্তব অগ্রগতি ৯১ শতাংশ। অপরদিকে নদীশাসনের কাজ করছে চীনের সাইনোহাইড্রো কর্পোরেশন লিমিটেড। নদীশাসন কাজে ৮ হাজার ৭০৭ কোটি ৮১ লাখ টাকার মধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়েছে ৫ হাজার ৬৭৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। মূল সেতু, নদীশাসন, সড়ক নির্মাণসহ সব মিলিয়ে পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পে এখন পর্যন্ত ব্যয় ধরা আছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। নভেম্বর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ২৪ হাজার ১১৫ কোটি ২ লাখ টাকা।

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বাসেক) ২০১০ সালের এপ্রিলে প্রকল্পের জন্য প্রাক যোগ্যতা দরপত্র আহ্বান করে। ২০১১ সালের শুরুর দিকে সেতুর নির্মাণ কাজ আরম্ভ হওয়ার কথা ছিল এবং ২০১৩ সালের মধ্যে প্রধান কাজগুলো শেষ হবে (সকল কাজ ২০১৫ সালের শেষ নাগাদ সম্পন্ন হবে)। প্রস্তাবিত পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প মাওয়া-জাজিরা পয়েন্ট দিয়ে নির্দিষ্ট পথের মাধ্যমে দেশের কেন্দ্রের সাথে দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের সরাসরি সংযোগ তৈরি করবে। এই সেতুটি অপেক্ষাকৃত অনুন্নত অঞ্চলের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও শিল্প বিকাশে উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রাখবে। প্রকল্পটির ফলে প্রত্যক্ষভাবে প্রায় ৪৪,০০০ বর্গ কি.মি. (১৭,০০০ বর্গমাইল) বা বাংলাদেশের মোট এলাকার ২৯ শতাংশ অঞ্চলজুড়ে ৩ কোটিরও অধিক জনগণ প্রত্যক্ষভাবে উপকৃত হবে। ফলে প্রকল্পটি দেশের পরিবহণ নেটওয়ার্ক এবং আঞ্চলিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, স্প্যানগুলোর উপর সড়ক ও ট্রেন লাইন (সস্ন্যাব) বসানোর কাজো এগিয়ে চলছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও করোনার মধ্যেও ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত মূল সেতুর বাস্তব কাজ শেষ হয়েছে ৯১ শতাংশ। সার্বিকভাবে প্রকল্পের অগ্রগতি ৮২ দশমিক ৫০ শতাংশ। বাকি অংশ নির্মাণ কাজ ২০২১ সালের মধ্যে শেষ করার সময়সীমা রয়েছে। যদিও মহামারীর প্রভাবসহ নানা কারণে ওই সময়ের মধ্যে সেতু নির্মাণ কাজ শেষ করা নিয়ে সংশয় রয়েছে। সেক্ষেত্রে ২০২২ সালের মার্চে গাড়ি চলাচল শুরুর জন্য খুলে দেয়ার পরিকল্পনা আছে সেতু কর্তৃপক্ষের।

সমপ্রতি সরেজমিন দেখা গেছে, দোতলা আকৃতির পদ্মা সেতুতে একই সঙ্গে ট্রেন ও গাড়ি চলাচলের লক্ষ্যে প্রস্তুত করা হচ্ছে। রেল ও গাড়ি চলাচলের রাস্তা নির্মাণের অংশ হিসেবে পৃথকভাবে সস্ন্যাব বসানোর কাজ জোরগতিতে এগিয়ে চলছে।

দোতলা আকৃতির সেতুর নিচের অংশে রেলওয়ে সস্ন্যাব ও উপরের অংশে রোডওয়ে সস্ন্যাব বসানো হচ্ছে। ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ২ হাজার ৯১৭টি রোডওয়ে সস্ন্যাবের মধ্যে ১ হাজার ২৬১টি বসানো হয়েছে, যা শতকরা ৪৩ দশমিক ২৩ শতাংশ। এ সস্নাবের উপর পিচঢালা রাস্তা নির্মাণ করা হবে। একই সময়ে সেতুর নিচের অংশে ২ হাজার ৯৫৯টি সস্ন্যাবের মধ্যে ১ হাজার ৮৬৮টি স্থাপন করা হয়েছে, যা শতকরা ৬৩ দশমিক ১৩ শতাংশ। এর উপর ট্রেন লাইন বসানো হবে। মাওয়া ও জাজিরা ভায়াডাক্টে ৪৮৪টি সুপারটি গার্ডারের মধ্যে ৩০৩টি স্থাপন করা হয়েছে। তবে পদ্মা সেতুর তুলনায় নদীশাসনের কাজ কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে। সামপ্রতিক নদী ভাঙনে আরো জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তবুও ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত নদীশাসনের কাজ এগিয়েছে ৭৫ দশমিক ৫০ শতাশ। মাওয়া ও জাজিরা সংযোগ সড়ক নির্মাণ আগেই শেষ হয়েছে।