সংবাদ শিরোনামঃ
দেশব্যাপি বাড়ছে সামাজিক অপরাধ, দরকার জরুরি পদক্ষেপ বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর অধঃস্তন পুলিশ কর্মকর্তা/কর্মচারীদের বিভাগীয় পদোন্নতি পরীক্ষায় পুলিশ সুপার মোঃ আক্তার হোসেন ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প: সৌজন্যে আলিফ মীম হাসপাতাল লক্ষ্মীপুরে নবাগত পুলিশ সুপার আক্তার হোসেনের সাথে সাংবাদিকদের মতবিনিময় লক্ষ্মীপুরে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোঃ নাহিদ ইসলামের আগমনে জেলাপ্রশাসন ও জেলা পুলিশ প্রশাসনের শুভেচ্ছা কমলনগর উপজেলা আ’ লীগের সভাপতি মোঃ নিজাম উদ্দিনের সুস্থতায় কমল নগরের মানুষের মাঝে আনন্দ অশ্রু বৃহত্তর নোয়াখালী আন্ত:স্কুল বিতর্ক প্রতিযোগিতা -২০২৩ লক্ষ্মীপুর কাজী ফারুকী স্কুল এন্ড কলেজে অনুষ্ঠিত ফুটপাত দখলমুক্ত করা প্রয়োজন ঔষধ কোম্পানি গুলো মেয়াদ উত্তীর্ণ ঔষধ ফেরত নিতে গড়িমসি করায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ভোক্তারা লক্ষ্মীপুরে অস্ত্র -গুলি সহ যুবলীগ নেতা হত্যা মামলার আসামি গ্রেপ্তার, লক্ষ্মীপুর -৩ সদর আসনের নির্বাচনে অনিয়ম রোধে অনুসন্ধান কমিটি লক্ষ্মীপুরের কৃতি সন্তান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ড,মাকসুদ কামালকে ফুলেল শুভেচ্ছা প্রদান দুস্থ মানবতার সেবায় এগিয়ে আসা “সমিতি ওমান ” কর্তৃক চট্টগ্রামে ইফতার সামগ্রী বিতরণ
দৈনিক জনতা’ সম্পাদক আহ্সান উল্লাহর সাংবাদিকতার ৫৮ বছর

দৈনিক জনতা’ সম্পাদক আহ্সান উল্লাহর সাংবাদিকতার ৫৮ বছর

ভি বি রায় চৌধুরীঃ বিশিষ্ট সাংবাদিক ও দৈনিক জনতা পত্রিকার সম্পাদক আহ্সান উল্লার সাংবাদিকতায় ৫৮ বছর অতিক্রম করেছে বলে এক আলাপচারিতা কালে তিনি সাংবাদিকদের বলেন। গত ২৪ এপ্রিল শনিবার ইফতারির পরে পত্রিকাটির সম্পাদকের কার্যালয়ে এক সময়ের সুইডেন প্রবাসী ও বিশিষ্ট মেন্টর মিজানুর শামিমের সাথে এক স্বাক্ষাতকালে দেশ বিদেশের নানান বিষয় নিয়ে খোলামেলা মত প্রকাশ কালীন সময়ে তিনি বলেন, শেওড়াপাড়ার বাসা থেকে কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে আমি হেঁটে রওনা দিতাম। বাসে উঠে ফার্মগেট সেখান থেকে বাস পাল্টে পল্টন। এরপর হেঁটে ফকিরাপুল দৈনিক জনতা অফিস। সম্পাদনা শেষে কাগজ প্রেসে দিয়ে রাত ১১টায় বাড়ি ফিরতেন।

প্রতিদিন তাঁর একই রুটিন। দীর্ঘ ৫৮ বছর ধরে। আহ্সান উল্লাহ একজন সাংবাদিক। ১৯৬২ সালে ইত্তেফাক থেকে শুরু। এরপর বাংলার বাণী, ভারত বিচিত্রা, জনতা, বাসস হয়ে ফের দৈনিক জনতায়। তিনি ১৯৭১ সালে হানাদারদের পুড়িয়ে দেওয়া ইত্তেফাক অফিসে বসে কাজ করেছেন।

বেড়ে ওঠা:
মাগুরা জেলার শালিখা থানার শরুশুনা নামের এক গ্রামে ১৯৪০ সালে আহ্সান উল্লাহ নানার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন তাঁর মামা। গ্রামের পাঠশালায় তাঁর শিক্ষার হাতেখড়ি। বাবা মৌলভি মাহ্বুবুর রহমান বিএবিটি’র বাড়ি যশোর সদর উপজেলার কৈখালী গ্রামে। তিনি অবিভক্ত বাংলায় শিক্ষা বিভাগের উপ পরিদর্শক ছিলেন। ছিলেন মুর্শিদাবাদ নবাব বাহাদুর ইনস্টিটিউটের শিক্ষক। বাবার চাকরি সূত্রে আহ্সান উল্লাহ ছোটবেলায় কলকাতায় গিয়ে পার্ক সার্কাস সাহেবদের এক স্কুলে ক্লাস ওয়ানে ভর্তি হন। একদিন টিচার বেত দেখালে তিনি আর স্কুলে যাননি। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর তিনি যশোর শহরের পুরনো কসবা এলাকায় চলে যান। সেখানে গিয়ে স্থানীয় মুসলিম একাডেমি স্কুলে ভর্তি হন ক্লাস থ্রিতে। ফাইভ পর্যন্ত পড়ে বাবার চাকরিসূত্রে নড়াইল গিয়ে বড়দিয়া স্কুলে ভর্তি হন। এখানে কিছুদিন পড়ার পর মা আনোয়ারা খাতুন তাঁকে ঢাকায় নিয়ে যান। ঠাঁই হয় আজাদ পত্রিকার যুগ্ম বার্তা সম্পাদক মামা সিরাজুদ্দীন হোসেনের বাড়ি (১৯৭১ সালে সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন শহীদ হন)। আহ্সান উল্লাহ ঢাকার গ্র্যাজুয়েট হাই স্কুল ও কেএল জুবলি হাই স্কুলে লেখাপড়া করেন। ক্লাস নাইনে ওঠার পর আহ্সান উল্লাহ ফের যশোর ফিরে আসেন। ভর্তি হন সম্মিলনী ইনস্টিটিউটে। ১৯৫৯ সালে এখান থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। ১৯৬০ সালে ভর্তি হন যশোর এমএম কলেজে। ১৯৬১ সালে এইচ এস সি পাস করে আবার ঢাকায় গিয়ে মামাবাড়ি ওঠেন। ১৯৬২ সালে বিএ পড়তে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। বিএ পড়ার সময়ই তিনি সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত হন।

২৫০ টাকা বেতনে সাংবাদিকতা শুরু:
দৈনিক জনতা সম্পাদক আহ্সান উল্লাহ বললেন, ‘ইত্তেফাকে সাব-এডিটর পদে চাকরি নেই। বেতন ২৫০ টাকা। তখন ইত্তেফাকে ‘হ্যান্ড কম্পোজ’ ছিল। সিসার অক্ষর সাজিয়ে কম্পোজিটররা বাক্য তৈরি করতেন। আমি প্রুফ দেখতাম। অনুবাদ করতাম। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ইত্তেফাক অফিস পুড়িয়ে দেয়; এমনকি কামানের গোলাও ছোড়ে। বন্ধ হয়ে যায় ইত্তেফাক। আমি দূর থেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পোড়া অফিস দেখতাম। এরপর হানাদারদের চাপে আবার ইত্তেফাক প্রকাশিত হয়। ১৯৭২ সাল পর্যন্ত আমি এই পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলাম।’ এরপর আহ্সান উল্লাহ ১৯৭২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ফজলুল হক মনির ডাকে ‘বাংলার বাণীতে’ যোগ দেন। ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ওই পত্রিকায় কর্মরত ছিলেন। ওই বছর তিনি ‘ভারত বিচিত্রা’ পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে কাজ শুরু করেন। তিনিই প্রথম এই পত্রিকার বাংলাদেশি সম্পাদক। সাংবাদিকতার পাশাপাশি ১৯৭৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিভাগে ভর্তি হয়ে ১৯৮০-৮১ সালে তিনি ওই বিভাগ থেকে এমএ পাস করেন। ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত ভারত বিচিত্রার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ওই বছরই তিনি দৈনিক জনতায় সিনিয়র সাব-এডিটর হিসেবে যোগ দেন। ১৯৯৬ সালে দৈনিক জনতা বন্ধ হয়ে যায়। আহ্সান উল্লাহ পরে বাসসে চাকরি করেছেন। ২০০৪ সালে আবার দৈনিক জনতায় যোগ দেন বার্তা সম্পাদক হিসেবে। এখন তিনি পত্রিকাটির সম্পাদক। সন্ধ্যা থেকে তিনি পত্রিকাটির সম্পাদনার কাজ করেন।

আহ্সান উল্লাহর শখ বই পড়া:
তাঁর সংগ্রহে পাঁচ হাজারেরও বেশি বই আছে। প্রিয় লেখক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই লেখকের ১০ খণ্ডের রচনাবলি, রবীন্দ্রনাথের ২২ খণ্ডের রচনাবলি এবং শরৎচন্দ্রের রচনাবলিসহ খ্যাতিমান লেখকদের বই তিনি পাঁচটি আলমারিসহ ঘরের মধ্যে স্তূপ করে রেখেছেন। অফিস থেকে বাড়ি ফিরে বইয়ের পাতা উল্টান। রাত ৩টার দিকে ঘুমাতে যান। বাসায় গৃহস্থালি কাজের পাশাপাশি দিনের বেলায়ও তিনি বই পড়েন। আহ্সান উল্লাহ বলেন, ‘একবার মালিক কর্মী ছাঁটাইয়ের উদ্যোগ নেন। তিনি আরো বললেন, ‘আমি সংবাদ সংক্রান্ত ব্যাপারে কোনো দিন কারো কাছ থেকে পাঁচ টাকাও নিইনি। এক কাপ চা-ও খাইনি। মিথ্যা কথা বলিনি। সাংবাদিকের কাজ হচ্ছে সত্য প্রতিষ্ঠা করা। মানুষ যখন কোথাও বিচার না পায়, তখন সাংবাদিকের দ্বারস্থ হয়। তিনি তাকে ন্যায়বিচার পাওয়ার পথ দেখান।’

ব্যক্তিগত জবীন:
আহ্সান উল্লাহর দীর্ঘ জীবনের সঙ্গী স্ত্রী নাজমা আরা ৪০ বছর ধরে শিক্ষকতা পেশার সাথে যুক্ত ছিলেন। উনার স্ত্রী বিশিষ্ট সমাজসেবী অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা মোছা. নাজমা আরা বেগম গত ১৩ এপ্রিল মৃত্যুবরব করেন বলে তিনি জানান। তার মৃত্যুতে লক্ষ্মীপুর সাংবাদিক কল্যাণ সংস্থার সভাপতি ও দৈনিক জনতা’র স্টাফ রিপোর্টার ভি বি রায় চৌধুরী এবং রায়পুর উপজেলার রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি ও দৈনিক জনতা’র রায়পুর প্রতিনিধি পীরজাদা মাসুদ হোসাইন গভীর শোক প্রকাশ করেন এবং শোক সন্তপ্ত পরিবার বর্গের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। সম্পাদক মহোদয়ের সাথে আলাপচারিতা কালে উপস্থিত সকলে শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করে মরহুমার রুহের মাগফিরাত কামনা করেন।