গণপরিবহণে সেই পুরনো রূপ

স্টাফ রিপোর্টার
করোনাকালের আগের ভাড়ায় ফিরেছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের গণপরিবহন। তবে এখনও ভাড়া নৈরাজ্য থামেনি। বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। পাশাপাশি গণপরিবহনও কম দেখা গেছে। ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে পরিবহন চালক ও হেলপারদের বাকবিত-া হতেও দেখা গেছে। যাত্রীদের অভিযোগ, আগের ভাড়ার কথা মনে করিয়ে না দিলে নিজ ইচ্ছায় আগের ভাড়া নিচ্ছে না পরিবহনগুলো। আর এসব কারণেই বিভিন্ন স্থানে যাত্রীদের সঙ্গে বাকবিত-া হতে দেখা গেছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে পরিবহনগুলোতে যাত্রীদের সংখ্যা বাড়লেও পরিবহনের সংখ্যা কমেছে। সকালের দিকে কিছুটা বেশি থাকলেও দুপুরের দিকে অনেক কম দেখা গেছে। এর কারণ হিসেবে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগে একটি পরিবহনে আসনের অর্ধেক যাত্রী পরিবহন হতো। এখন সেখানে তার শতভাগ আসন ভর্তি করে যাত্রী পরিবহন হচ্ছে। পূর্বের ভাড়ায় ফিরলেও যাত্রী সংখ্যা বাড়েনি। সে কারণে বাসের সংখ্যা কম। পরিবহনে আগের ভাড়ায় ফেরার ঘোষণা থাকলেও এখনও ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। এরপরও ভাড়া কমায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন তারা।

সকালে ফকিরাপুল এলাকায় দেখা গেছে, প্রতিটি আসনেই যাত্রী বসিয়ে বাস চালানো হচ্ছে। কোথাও পুরোপুরিভাবে স্বাস্থ্যবিধি পালন করতে দেখা যায়নি। যাত্রীদের অধিকাংশের মুখে মাস্কও দেখা যায়নি। নেই হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবহারও। শাহবাগ মোড়ে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিটি পরিবহনেই সবকটি আসনে যাত্রী রয়েছে। এ সময় মিডওয়ে পরিবহনের একজন যাত্রীজানান, আগের ভাড়ার কথা কন্ডাক্টরদের মনে করিয়ে দিতে হচ্ছে। তা না হলে তারা করোনাকালের জন্য যে ৬০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়, সেই ভাড়াই রেখে দিচ্ছে। আমার থেকেও এমন করা হয়েছে। নগরীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে কথা হয় শিখর পরিবহনের যাত্রী মহিউদ্দিনের সঙ্গে। তিনি মিরপুর ১০ নম্বর থেকে সেখানে এসেছেন। করোনাকালের আগের নির্ধারিত ভাড়া অনুযায়ী এই পথের ভাড়া হচ্ছে ১৮ টাকা, করোনাকালীন সময়ে এখান থেকে ৩৫ টাকার মতো আদায় করা হতো। কিন্তু আজ তার থেকে ২০ টাকা আদায় করা হয়েছে।

বিহঙ্গ পরিবহনের চালক সামছুদ্দিন বলেন, আমরা আগের ভাড়াই আদায় করছি। কিন্তু কিছুকিছু যাত্রী সেই ভাড়াও দিতে চায় না। যে কারণে কারও কারও সঙ্গে ঝামেলা হয়। এ ছাড়া সিটের বাইরে কোনও যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে না। মোড়ে মোড়ে বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালত আছে। তারা জরিমানা করে দিচ্ছে। জানতে চাইলে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, আমরা সব মালিককে চিঠি দিয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিয়েছি। কোনও বাসে দাঁড়িয়ে বা বর্ধিত ভাড়া আদায় করা যাবে না। যদি কেউ এমন করে থাকে বা কোনও যাত্রীর কাছ থেকে অভিযোগ আসে সঙ্গে সঙ্গে সেই পরিবহনের বিরুদ্ধ আইনগত ব্যবস্থার পাশাপাশি সাংগঠনিক ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। বিআরটিএ’র উপপরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) মোহাম্মাদ আবদুর রাজ্জাক বলেন, ভাড়া মনিটরিংসহ পরিবহনের অন্যান্য অনিয়ম দেখতে নগরজুড়ে আমাদের বেশ কয়েকটি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হচ্ছে। তারা এসব বিষয় দেখভাল করছেন। কেউ আইন ভঙ্গ বা সরকারের নির্দেশনা অমান্য করলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর আগে গত ৩১ মে সরকার আন্তঃজেলা বাস পরিষেবাসহ সব বাসের ভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। করোনার কারণে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য মোট আসনের অর্ধেক যাত্রীকে নিয়ে যানবাহন চলাচলের শর্ত হিসেবে বাস ভাড়া বাড়ানো হয়। সামপ্রতিক দিনগুলোতে দেখা যায়, গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। ভাড়াও নেয়া হচ্ছে বর্ধিত হারে। এজন্য বিভিন্ন সংগঠন থেকে বর্ধিত ভাড়া বাতিলের দাবি ওঠে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *