রাজধানীর গুলশানে কলেজছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়ার মৃতদেহ উদ্ধারের পর সুরতহাল রিপোর্ট করা হয়েছে। ওই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে মুনিয়ার গলায় ক্ষতচিহ্ন, হাতে ও মুখে খুব গভীর কালসিটে দাগ ও নিম্নাঙ্গ রক্তাক্ত ছিল। এছাড়াও মুনিয়ার মরদেহ বিছানার উপর হালকা হাঁটুভাঙা অবস্থায় ঝুলছিল। বিছানায় ঠেকানো ছিল পা। দু’পায়ের ঠিক মাঝে ছিল একটি টুল। সেই টুলটিও পড়ে যায়নি। বিছানাটি ছিল পরিপাটি ও গোছানো। মুনিয়ার মৃত্যুও ঘটনাটি তদন্তকারী কর্মকর্তারা গুরুত্বসহকারে তদন্ত করছেন। তবে পুলিশ গুলশানের ওই ভবনের ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করছে।
জানা গেছে, রাজধানীর গুলশানের ১২০ নম্বর সড়কের ১৯ নম্বর বাসার একটি ফ্ল্যাট থেকে কলেজছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়ার লাশ উদ্ধারের ঘটনাটি আত্মহত্যা নয় হত্যাকা- বলে মনে করছেন নিহতের বড় বোন ও মামলার বাদী ব্যাংক কর্মকর্তা নুসরাত জাহান। তিনি দাবি করেছেন, তার ছোট বোনকে হত্যার পর আত্মহত্যা বলে চালানোর জন্য সিলিং ফ্যানের সঙ্গে তার লাশ ঝুলিয়ে রাখা হতে পারে। মুনিয়া যদি আত্মহত্যাই করে তাহলে বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীর এ জন্য দায়ী। কারণ তিনি প্রেমের নামে দুই বছর ধরে মুনিয়াকে স্ত্রীর মতো ব্যবহার করে ধোঁকা দিয়েছেন। প্রতারক আনভীরের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়ে খোদ প্রধানমন্ত্রী ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভিকটিমের বোন নুসরাত। মৃত মুনিয়ার বড় বোন নুসরাতকে মুঠোফোনে কল দিয়ে হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেছেন। নুসরাত বলেন, অগনিতবার ফোন করে আমাকে খারাপ খারাপ কথা বলছে। নম্বরগুলো নোট করে রেখেছি আমি। ফোন অফ করে দিয়েছি আমি। তবে মুনিয়ার মৃত্যুর ঘটনাটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা, সে বিষয়ে এখনও পরিষ্কার কিছু জানাতে পারেনি পুলিশ। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে আসা যাবে না বলে জানানো হয় পুলিশের পক্ষ থেকে। মরদেহের সুরতাহাল রিপোর্টে বলা হয়েছে, গলার বাম পাশে অর্ধ চন্দ্রাকৃতির গভীর কালো দাগ আছে। যৌনাঙ্গ দিয়ে রক্ত বের হওয়ার আলামত মিলেছে বলেও উল্লেখ আছে। এদিকে, বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীর এখন কোথায় তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুঞ্জন ছড়িয়েছে, আনভীর সোমবার রাতেই দেশত্যাগ করেছেন। যদিও ইমিগ্রেশন পুলিশ সূত্র জানাচ্ছে, আনভীর দেশেই আছেন।
বিমানবন্দরের একটি সূত্র জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার বিকালে একটি চাটার্ড ফ্লাইটে সায়েম সোবহান আনভীরের পরিবারের সদস্যদের দুবাই যাওয়ার কথা ছিল। গত মঙ্গলবার বিকেলে ভিপিসি-১১ নম্বর ফ্লাইটে সায়েম সোবহানের ভাই সাফওয়ান সোবহান, রানিয়া আফরোজ সোবহান, শেহজাদ সোবহান, পিয়াসা সোবহান দুবাইয়ের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়েন। এছাড়া ওই ফ্লাইটে হোসনে আরা খাতুন ও মন্টু মিয়া নামে আরো দুজন যাত্রী ছিলেন। এই ফ্লাইটেই সায়েম সোবহান আনভীরসহ পরিবারের অন্য সদস্যদেরও দুবাই যাবার কথা ছিল। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে অন্যরা কেউ যাননি।
গুলশান থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শামীম হোসেন বলেন, হত্যার আগে ভিকটিম ধর্ষিত হয়েছে কি না তা জানার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। কিংবা তাকে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছিল কিনা তাও তদন্তের আওতায় আসার সুপারিশ করা হয়েছে।