ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার মুজিব নগরে চর নিউলিন বাংলাবাজার নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কর্তৃক বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষককে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। বিদ্যালয়ে বিদ্যমান অন্তহীন অনিয়ম নিয়ে প্রশ্ন তোলায় ক্ষুদ্ধ প্রধান শিক্ষক ওই সহকারী শিক্ষককে মারধর করেন। গত রোববার সকালে বিদ্যালয় চলাকালে বিদ্যালয়ের অফিসকক্ষে এই ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার সময় বিদ্যালয়ের অপরাপর সহকারী শিক্ষক ও কর্মচারীরা অফিসকক্ষে উপস্থিত ছিলেন। প্রধান শিক্ষকের এহেন কর্মকান্ড নিয়ে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।
অভিযোগে জানাগেছে,২০০০ সনে চর নিউলিন বাংলাবাজার নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর ২০১০ সনে এমপিওভূক্ত হয় প্রতিষ্ঠানটি। এমপিওভূক্তির পর থেকে এখন পর্যন্ত বিদ্যালয়ে দৃশ্যমান কোন কর্মকর্তার পরিদর্শন হয়নি এবং মিনিস্ট্রি ভিজিটও হয়নি। এই সুযোগে এবং আওয়ামীলীগের ক্ষমতা বলয়ের লোক হওয়ায় প্রধান শিক্ষক দীর্ঘ এই সময়ে বিদ্যালয়ের রিজার্ভ তহবিল এবং উপার্জিখাতের সকল আয় বিধিবর্হিভূত ভাবে আত্মসাত করেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা জানান, বছরের শুরুতে ভর্তির ফি, বছরের তিনটি পরীক্ষার ফি এবং ফরম পুরণের সব টাকা প্রধান শিক্ষক নানান অজুহাতে নিজেই আত্মসাত করছেন। এমনকি শিক্ষার্থীদের উপ-বৃত্তির টিউশন ফি সব টাকা প্রধান শিক্ষক হাতিয়ে নিচ্ছেন। পাশাপাশি প্রতি বছর রিজার্ভ তহবিলের টাকা জমার নামে সহকারী শিক্ষক-কর্মচারীদের থেকে মোটা অঙ্কে চাঁদা নিয়ে আসছেন। এ বছরও রিজার্ভ তহবিলে জমার জন্য সহকারী শিক্ষকদের কাছ থেকে দেড় লাখ চাঁদা ধার্য করেছেন। সহকারী শিক্ষকরা রিজার্ভ তহবিলে জমার জন্য এ চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন এবং টিউশন ফির অংশ বুঝে পাওয়ার দাবী তুলেছেন। এই দু’টি ইস্যুতে বেশ কিছুদিন ধরে প্রধান শিক্ষকের সাথে সহকারী শিক্ষকদের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে প্রধান শিক্ষক রোববার সহকারী শিক্ষকদের নিয়ে বিদ্যালয়ের অফিসকক্ষে বৈঠকে বসেন। ওই বৈঠকে বিদ্যালয়ের গত দু’বছরের আয়-ব্যয়ের হিসেব চাওয়ায় ক্ষুদ্ধ হয়ে প্রধান শিক্ষক এনটিআরসি থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত একজন সহকারী শিক্ষককে মারধর করেন।
গতকাল সোববার বিদ্যালয় পরিদর্শনে গেলে প্রধান শিক্ষককে বিদ্যালয়ে পাওয়া যায়নি। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান, প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদাউস নুপুর ২০১০ সালে এই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ নেন এবং ২০১৫ সালে এমপিওভূক্ত হয়ে নিয়মিত বেতন-ভাতা নিচ্ছেন। কিন্ত তিনি গত ৯ বছরে একদিনের জন্যও স্কুলে আসেননি। তার পরিবর্তে একজন প্যারা শিক্ষক খাটানো হচ্ছে। যাকে প্রতিমাসে ৫ হাজার টাকা করে সম্মানি দেয়া হচ্ছে। ওই প্যারা শিক্ষকের সম্মানি দেয়ার জন্য প্রতি মাসে শিক্ষার্থীদের জনপ্রতি ৫০ টাকা করে চাঁদা নেয়া হচ্ছে। এছাড়াও বিদ্যালয়ের বিদ্যুৎ বিলের জন্য শিক্ষার্থী প্রতি মাসিক ৫০ টাকা হারে চাঁদা আদায় করছেন। এছড়াও প্রত্যেক পরীক্ষায় বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত ১৯৫ জন শিক্ষার্থীর প্রত্যেকের থেকে ৪০০ হইতে ৭০০ টাকা হারে পরীক্ষার ফি নেয়া হচ্ছে। অন্য বিদ্যালয়ের নামে এই বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়া ২২জন শিক্ষার্থীর ফরম পুরণের নামে সাড়ে চার হাজার টাকা করে নেয়া হয়েছে। নানান খাত থেকে এভাবে হাতিয়ে নেয়া সব টাকা প্রধান শিক্ষক একাই আত্মসাত করছেন। যা নিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ,শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা চরম ভাবে ক্ষুদ্ধ।
এই বিদ্যালয়ের জমিদাতা জহিরুল ইসলাম বাবুল জানান, প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী ২০১৫ সাল থেকে এই বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে বেতন পাচ্ছেন। কিন্ত তিনি একদিনও স্কুলে আসেননি। প্রধান শিক্ষক নিজেও স্কুলে আসেন না। স্কুলের হাজিরা খাতা কেউ কোন দিন দেখেনি। ২/৩ মাস পর প্রধান শিক্ষক স্কুলে এলে হাজিরা খাতা নিয়ে আসেন।ওই দিন সব শিক্ষক কর্মচারীর পেছনের স্বাক্ষর নেয়া হয় এবং নিজের স্ত্রীর স্বাক্ষরও প্রধান শিক্ষক নিজে দিয়ে দেন।এসব অভিযোগ ইতিপূর্বে আমরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে জানিয়েছিলাম। কিন্ত কোন ফল হয়নি।অভিযোগ প্রসঙ্গে সহাকারী শিক্ষিকা জান্নাতুল ফেরদাউস নুপুর জানান, আমি ৫ হাজার টাকা করে দু’জন প্যারা শিক্ষক দিয়েছি। কত টাকা বেতন পাই আর থাকেই বা কি। প্রধান শিক্ষক কামাল হোসেন সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, শিক্ষকদের সাথে একটু ভূল বুঝাবুুঝি হয়েছিল কিন্ত সেসব সমাধানও হয়েছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো.মহিউদ্দিন জানান, বিদ্যালয়ের রিজার্ভ তহবিলের টাকা উত্তোলন অপরাধের সামিল।পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে অন্তহীন অভিযোগ উঠেছে। বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হবে।






