দুর্নীতি ও মাদকের মহামারি থেকে দেশ-জনগণকে বাঁচান, নিজেও বাঁচুন
ভিবি নিউজ ডেস্ক – ফারুক আল ফয়সাল, লিখক,গবেষক, কবি ও সাংবাদিক – আজ আমারা এমন এক সময় আপনাদের স্মরণাপন্ন হয়েছি যখন আমরা আপনারা আমি, আপনি সকলে মিলে সর্বস্তরের জনগণ সাম্পতিক সময়ে দেশে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া দুর্নীতি ও মাদকের ভাইরাসে আক্রান্ত।
দুর্নীতি মানুষকে ন্যায়নীতি সততা বিবর্জনে উৎসাহিত করার মধ্যদিয়ে অসততার দিকে ধাবিত করে। মাদক মানব মন ও মস্তিষ্কে সুস্থ ও সুন্দর উদারনৈতিক অহিংস চিন্তার বিরুদ্ধে উম্মাদনা সৃষ্টি এবং বিভ্রাসি মানসিক বিশৃঙ্খলায় অমানুষে পরিণত করে। যে কোন সমাজ দেশ জাতিতে যতো হিংসা হানাহানী রাজনৈতিক দেশপ্রেম সুস্থ্য সুন্দর চিন্তা নীতি-নৈতিকতার অভাব, বৈরীতা অনৈক্য পরিলক্ষিত হওয়ার পিছনে প্রথমত দর্নীতি ও মাদকতাই দায়ী। আমাদের স্বাধীন দেশে ব্রিটিশ উপনিবেশিক এর পরে পরাধীন উপনিবেশিক আমলের ধারাবাহিকতায় আমে দূর্নীতি ও মাদক সমাজে মহামারি ও জাতীয় দুর্যোগ আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। আমরা জানি যেকোন জাতীয় রাজনৈতিক ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলার পূর্বে প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য সংহতি। আর জাতীয় ঐক্য সংহতির জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন দল মতের উর্ধের দুর্নীতি ও মাদকের করাল গ্রাস থেকে দেশ-জাতিকে মুক্ত করা।
দুর্নীতি ও মাদক মুক্তি আজ যখন দেশ জাতির প্রথম দায়িত্ব ও কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে তখন দেশের প্রত্যেক সত্যের সৈনিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য নিজ নিজ বিবেকের তাগিদে দুর্নীতি ও মাদককে ঘৃণার দৃষ্টিতে না বলা।
একই দৃষ্টিতে সারা দেশে সমাজ সচেতনতা সৃষ্টির মধ্যদিয়ে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা।
আপনারা জানেন যে, আজ থেকে ৫৩ বছর পূর্বে পরাধীন পাকিস্তানী লুটেরা শাসক শোষক গোষ্ঠীর শাসন শোষণ বৈষম্য, দুর্নীতি ও মাদকীয় অমানবিক দুঃশাসনের বিরুদ্ধে এদেশ জাতির এক রক্তক্ষয়ী লড়াই ও সর্বাত্মক মুক্তিযুদ্ধে লাখো শহীদের জীবনের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আমাদের বাংলাদেশের ভোগৌলিক স্বাধীনতা ও মুক্তির সু-মহান বিজয় অর্জিত হয়। যার মধ্যদিয়ে চূড়ান্ত বিজয় সুদীর্ঘ পরাধীন ব্রিটিশ উপনিবেশিক ও পাক-প্রায়োপনিবেশিক শাসন শোষণ বৈষম্য বঞ্চনা অবসান করে সদ্য স্বাধীন দেশে দেশে সবার মৌলিক চাহিদা অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থানের নিশ্চয়তা বিধান করে ধীরে ধীরে আর্থ-রাজনৈতিক সামাজিক সাংস্কৃতিক বৈষম্য নিরসন এর মধ্যদিয়ে আগামীর স্বাধীন সমৃদ্ধ সোনার স্বদেশ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সমুজ্জল স্বপ্ন ছিল। সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমাদের সদ্য স্বাধীন দেশের বিজয়ী বীর সাহসী মুক্তিযোদ্ধা, দেশরক্ষক সেনাবাহিনী, একঝাঁক মেধাবী তরুন ছাত্র-যুবক, পরিশ্রমী কৃষক-শ্রমিক, শ্রমজীবী নারী, আনী- গুণী শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, উকিল, আইনবিদ,আমলা, কবি, শিরী, সাহিত্যিক, সমাজসেবক, ডাক্তার, দেশপ্রেমিক শিল্প উদ্যোক্তা, এককথায় মেধাবী মানব সম্পদ, ফসলী মাটি এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূ-রাজনৈতিক অনুকুল অবস্থান ছিল। যার মধ্যদিয়ে একটি উন্নত আধুনিক গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল স্বদেশ গড়ার সুযোগ ও সম্বাবনা থাকার পরও দুঃখের সাথে রলতে হয় স্বাধীন দেশে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে উঠা সুদৃঢ় জাতীয় ঐক্য সংহতির আলোকে আমরা জাতীয় উজ্জীবন ঘটাতে পারিনি। স্বাধীন দেশে প্রণীত জাতীয় চার মূলনীতি- বাঙালী জাতীয়তাবাদ, অসাম্প্রদায়িকতা, গণতন্ত্র, মানবিক সাম্য অর্থে সমাজতন্ত্রের সাংবিধানিক ধারা বজায় রাখতে পারিনি। উপরন্ত সদ্য স্বাধীন দেশে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য সংহতি গড়ে উঠার পরিবর্তে কখনো এক দলীয়, কখনো বহুদলীয়, কখনো স্বৈরতান্ত্রিক এবং সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন রাজনীতি বেড়ে উঠার প্রেক্ষাপট তৈরি হয়। এতে একদিকে যেমন বিনষ্ট হয়েছে জাতীয় ঐক্য, অন্যদিকে আজও স্বাধীন বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে দরীদ্র সিমার কাতারে অবস্থান করছে। অপর দিকে স্বাধীন দেশে পরিচালিত পুরনো পাক-পরাধীন আমলের শাসন শোষণের আদলে বারবার ক্ষমতার লড়াইয়ে রক্তাক্ত পটপরিবর্তনে ক্ষমতাসীন ও বিরোধীদলীয় আসনে অধিষ্ঠিত নেতা নেতৃত্ব ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ দেশপ্রেম জাতীয়তাবোধের অভাব যেমনি পরিলক্ষিত হয়, তেমনি পরাধীন আমলের পুরনো পশ্চাৎপদ ধনবাদী আমলাতান্ত্রিক রাজনৈতিক ক্ষমতার চেয়ার দখলের নগ্ন প্রতিযোগিতা বহাল তবিয়তে থাকায় স্বাধীন দেশের রাজনীতিতে অনুপ্রবেশ ঘটে অপরিপক্ক অসাধু সুবিধাবাদী ও ব্যবসায়ীক নেতৃত্বের। যাহাতে সৃষ্ট অনিয়ম বিশৃঙ্খলার সুযোগে দেশের উপরি মহল থেকে তৃণমূল পর্যায়ে পাক আমলের দুঃশাসন মাদকাসক্তি, অস্ত্র অর্থ পেশী শক্তির দৌরাত্ম্যে সন্ত্রাস, এবং অনিয়ম যেখানে নিয়ম, দুর্নীতি যেখানে সুনীতি, মিথ্যা যেখানে সত্য হয়ে দাঁড়ায়।ব্যাংক বীমা রাষ্ট্রীয় অর্থনীতিকে দেউলিয়া এবং পরনির্ভরশীল ও ঋণগ্রস্থ করে তুলে। উন্নয়নের নামে স্বাধীন দেশে বিগত দিনে চলে প্রকাশ্য দুর্নীতির লুটপাটতন্ত্র। দেশপ্রেম জাতীয়তা ন্যায়নীতি সততার পরিবর্তে রাজনীতির নামে ব্যবসায়ীক মনোভাবে অবৈধ ভূমি দখল আত্মস্যাৎ ঘুষ দুর্নীতি ও বাজার সেন্ডিগেট সৃষ্টি করে রাতারাতি ধনী আরও ধনী গরীব আরও গরীব হয়ে পড়ে। স্বাধীন দেশের এমন নৈতি দারীদ্রতা রোধ, ঘুষ দুর্নীতি, মাদকাশক্তি, শোষণ বঞ্চনা বৈষম্য প্রতিরোধে গণ আন্দোলন ও গণঅভ্যখানে বিগত দিনে রাজপথে জীবন দিয়েছে বহু প্রতিবাদী নবীন তরুন যুব প্রাণ। স্বাধীন দেশে এতোসব সুমহান ত্যাগের ইতিহাস উপেক্ষার ফলে সামাজিক অঙ্গনে একদিকে নৈতিক চারিত্রিক অবক্ষয় ঘটে চলে। অন্যদিকে রাজনৈতিক অঙ্গনে পরস্পর সহনশীল মনোভাবে নিজ নিজ আদর্শ চর্চার ক্ষেত্র অস্ত্র অর্থ বল দ্বারা নিয়ন্ত্রীত হতে থাকে।ক্ষমতার উৎস জনগণের পরিবর্তে বন্দুকের নলে পরিণত হয়। গণতান্ত্রিক নির্বাচনী পটপরিবেশ যখন কেন্দ্র দখল, বুথ দখল, ব্যালট ছিনতাই, অর্থ বিত্ত ক্ষমতার প্রভাব, আদেশ নির্দেশ যেখানে বিজয় সুনিশ্চিত করে তোলে। যেখানে গোপনে স্বাধীনতার পরাজিত শক্তির সাথে নিজেদের একান্ত প্রয়োজনে রাতে আপোষ আবার দিবালোকে প্রকাশ্যে গল্পপোষা স্বাধীনতার পক্ষ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে আত্মপ্রবঞ্চনার এহেন দোদুল্যমানতায় স্বাধীনতার পরাজিত শক্তির পুনরাবির্ভাব ঘটা সহজ স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়ায়। এর থেকে মুক্তির উপায় শুধু সময়ের অপেক্ষা মাত্র।






