লক্ষ্মীপুর জেলায় জোয়ারের পানিতে ৪০ গ্রাম প্লাবিত

স্টাফ রিপোর্টার ভি বি রায় চৌধুরী-লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে মেঘনা নদীর তীরবর্তী এলাকার প্রায় ৪০টি গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। মেঘনার পানি স্বাভাবিক উচ্চতার চেয়ে গত তিন দিনে নদীতে প্রায় ৫/৬ ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে।

এতে করে লোকালয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে পানিবন্দি হয়ে পড়ছে এলাকার দুই লক্ষাধিক মানুষ। বৃহষ্পতিবার (৬ আগস্ট) রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত জোয়ারের পানি কমেনি বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় জোয়ারে রায়পুর উপজেলার কয়েকটি ঘেরের অর্ধকোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে ও কমলনগরে এক খামারের ৬ হাজার মুরগি পানিতে ডুবে মারা গেছে।

এতে প্রায় ৩০ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেন মুরগি খামারি। এছাড়াও ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রাপ্ত তথ্য মতে জানা যায় , রায়পুর থেকে লক্ষ্মীপুর সদর ও কমলনগর হয়ে রামগতি পর্যন্ত ৬০ কিলোমিটার নদী এলাকার প্রত্যেকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে বাড়ী ঘর রাস্তাঘাট পানিতে সয়লাব হয়ে গিয়াছে। লক্ষ্মীপুর জেলা সদরের করাতিরহাট, চররমনি,

ভূঁইয়ার হাট, চরমেঘা, রায়পুরের চর আবাবিল, খাসেরহাট, চরলক্ষ্মী, চরবংশী, চরভৈরবী, হাজীমারা, চর কাচিয়া, জালিয়ার চর, কুচিয়ামোড়া, চর ঘাশিয়া, টুনুর চর, কমলনগরের চরফলকন, চরকালকিনি, চরলরেন্স, নবীগঞ্জ ও রামগতির আলেকজান্ডারসহ প্রায় ৪০টি গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়। মেঘনা নদীর তীর থেকে এসব এলাকার প্রায় ৪ কিলোমিটার পর্যন্ত জোয়ারের পানি ঢুকেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুরের সদর রায়পুর রামগতি ও কমলনগর উপজেলায় প্রায় ৪০টি গ্রামে জোয়ারের পানি ঢুকে নদীর তীর থেকে ৪ কিলোমিটার এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। অস্বাভাবিক জোয়ারের কারণে নদী সংযুক্ত খাল, পুকুর, বসতঘর, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয়-প্রতিষ্ঠান ও রাস্তাঘাট হাঁটু পরিমাণ পানিতে ডুবে আছে।

কোথাও কোথাও কোমড় পরিমাণ পানি হয়েছে। এতে মেঘনা উপকূলীয় মানুষগুলো চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। রায়পুর উপজেলায় কয়েকটি ঘেরের প্রায় অর্ধকোটি টাকার মাছ জোয়ারে ভেসে গেছে। উপজেলার চর আবাবিলসহ কয়েকটি গ্রামের অন্তত ৩ হাজার পানের বরজ পানিতে তলিয়ে গেছে। পান নষ্ট হয়ে যাওয়ার শঙ্কা করছেন চাষীরা। অন্যদিকে কমলনগরের চরলরেন্স ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের তাজ পোল্ট্রি খামারের ৬ হাজার মুরগী জোয়ারের পানিতে ডুবে মারা গেছে।

নষ্ট হয়ে গেছে মুরগির খাবার। এতে প্রায় ৩০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে। তাজ পোল্ট্রি খামারের মালিক মো. ওসমান বলেন, জোয়ারের পানিতে আমার খামারের মুরগিগুলো মরে গেছে। আমার সব শেষ হয়ে গেছে। ঋণ নিয়ে খামারটি করেছি। ঋণের টাকা এখনো পরিশোধ করতে পারিনি। এদিকে কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)’র কাছে বর্তমান সার্বিক বন্যা পরিস্হীতি নিয়ে জানতে চাইলে ইউএনও মোবারক হোসেন বলেন,

পানিবন্দিদেরকে আশ্রয়ণ কেন্দ্রে যেতে বলা হয়েছে। সবাইকে শুকনো খাবার দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাবরীন চৌধুরী জানান, জোয়ারের কারণে বেশ কিছু কাঁচা, আধাপাকা ঘরবাড়ি ও সড়কের গাছসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছি। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণে কাজ চলছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *