স্টাফ রিপোর্টার- লক্ষ্মীপুর সহ দেশজুড়ে চলমান লকডাউনে চরম দুরবস্থায় পড়েছেন কর্মহীন স্বল্প আয়ের শ্রমজীবী মানুষ। কিন্তু খেটে খাওয়া নিম্ন-আয়ের শ্রমজীবী মানুষ এখন প্রায় সবাই কর্মহীন। চরম অর্থকষ্টে কাটছে তাদের জীবন। লক্ষ্মীপুর সহ সারা দেশে একই অবস্থা বিরাজ করছে। বিভিন্ন এলাকার ভাসমান নিম্ন-আয়ের মানুষের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়। এসব নিম্ন আয়ের মানুষদের মধ্যে রয়েছে, রিকশা-ভ্যানচালক, দিনমজুর, কাজের বুয়া, ভ্রাম্যমাণ হকার, পুরোনো কাগজ ও মালামাল সংগ্রহ করে বিক্রি করা মানুষ, হার্ডওয়্যার দোকানের কর্মচারী, বিভিন্ন মার্কেটের দোকানে কাজ করা মানুষ, পরিবহণ শ্রমিক। ৪ জুলাই রোববার সরকারঘোষিত লকডাউনের চতুর্থ দিনেও লক্ষ্মীপুরের রাস্তায় রাস্তায় পুলিশি তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। রাস্তায় কিছু রিকশা চললেও জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বের হলেই জরিমানাসহ শাস্তির মুখে পড়তে হয়েছে মানুষকে।
লক্ষ্মীপুর পৌরসভার বাঞ্ছানগর এলাকার পৌর ২ নং ওয়ার্ডের মুনসী বাড়ি বাসিন্দা শত বছর বয়সী নুরুলইসলাম মিঞা
ক্ষুধার জ্বালায় আর ঘরে থাকতে পারেন নি। তিনি ভিক্ষা করার জন্য লক্ষ্মীপুরের উপশহর দালাল বাজারে এসেছেন ৫ জুলাই সকালে। কিন্তু লকডাউন থাকায় জনগণের আনাগোনা কম, যার কারনে তিনি ভিক্ষাও পাননি বলে আমাদের এপ্রতিবেদক কে জানান। তিনি আরো বলেন শত বছর বয়স হয়েছে অথচ এখনো বয়স্কভাতার আওতায় আসেন নি। যদি সত্যি হয়ে থাকে তবে বিষয়টি দুঃখ জনক ছাড়া আর কি হতে পারে।
রায়পুর বাসা বাড়ির অন্তর্গত ৩ নং চরমোহনা ইউনিয়নের আনার উল্যা বাহাদুর বাড়ি মৃত সিরাজুল ইসলামের পুত্র আবুল বাশার ছোট বেলায় টায়ফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ডান পা পঙ্গুহয়ে যায়। যার কারনে ভিক্ষা বৃত্তি করে সংসার চলে। প্রতিবন্ধী ভাতা পায় মাসে ৭০০ শতটাকা। এদিয়ে কি হয়। লকডাউনের কারনে সরকারের নিয়মনীতি মেনে ঘরে বসে থাকা যায় কিন্তু ক্ষুধার জালায় অস্থির হয়ে তিনি ৫ জুলাই রাস্তায় নেমে এসেছেন। ভিক্ষাও সন্তোষ জনক পাননি।
আরো দেখা যাচ্ছে
শহরে ফুটপাত ও বস্তিতে অনেক নিম্ন-আয়ের শ্রমজীবী মানুষ ভাসমান অবস্থায় থাকেন। তারা প্রায় সবাই সংসারে অভাব-অনটনের কারণে পেটের দায়ে বিভিন্ন জেলা থেকে এসেছেন। অনেকে আবার নিজ পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস। এসব নিম্নবিত্ত মানুষ দিনমজুরের কাজ, রিকশা চালানো, বাসাবাড়ির কাজ, ফুটপাতে চা-সিগারেট বিক্রি করে জীবনযাপন করেন। করোনাকালের এই চলমান লকডাউনে দু’মুঠো ভাতের জোগাড় করতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। সরেজমিন দেখা যায়, অনেকে পারছেন না কোনো কাজ করতে। বাসাবাড়িতেও কাজের জন্য নেয়া হচ্ছে না তাদের। আবার কর্মহীন অনিশ্চিত জীবনের চিন্তা করে ঝুঁকি নিয়ে ট্রাকে করে ফিরছেন বাড়িতে কেউ কেউ। এই ছিন্নমূল নিম্ন-আয়ের মানুষের আয়ের সব পথ লকডাউনে বন্ধ হয়ে আছে। খাবারের অপেক্ষায় শুকনো মুখে তাকিয়ে থাকেন তারা। কোথাও কেউ খাবার নিয়ে আসছে কিনা এই ভেবে। গত বছর সরকার ও বিভিন্ন সংস্থা থেকে লকডাউন চালাকালে চাল, ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস নিম্ন-আয়ের লোকজন পেলেও এবার সেসবের দেখা খুব একটা মেলেনি।
এই বিষয়ে লক্ষ্মীপুরের জেলাপ্রশাসক মোঃ আনোয়ার হোছাইন আকন্দের নিকট দৈনিক জনতা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা যেখানেই এরকম অনাহারে থাকা মানুষের খবর পাচ্ছি, প্রশাসনের পক্ষথেকে সেখানে খাবার পৌঁছে দেয়া হচ্ছে, আর যদি কেউ বাদপড়ে তবে তাদের নাম ঠিকানা দিয়ে আমাকে জানান, প্রযাপ্ত পরিমানে খাবার আছে। পৌছে দেয়া হবে তাদের নিকট।