ভি বি রায় চৌধুরী
মানুষের প্রধান মৌলিক চাহিদা হচ্ছে খাদ্য। খাদ্য ছাড়া মানুষ বেঁচে থাকতে পারে না। মানুষের জীবন ধারণের পিছনে খাদ্যের ভূমিকা অপরিসীম। প্রাচীনকাল থেকেই খাদ্যের চাহিদা, উৎপাদন ও ব্যবহার চলমান রয়েছে। বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য যতটা জরুরি তার চেয়েও বেশি জরুরি নিরাপদ খাদ্য। স্বাস্থ্য ঝুঁকির অন্যতম কারণ অনিরাপদ খাদ্য। WHO (World Health Organization)-এর প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী প্রতি দশজনের মধ্যে একজন খাদ্যবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়। তাই সুস্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ খাদ্য গ্রহণ জরুরি। সময়ের সাথে সাথে খাদ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় এর উৎপাদনও ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তি কৃষিতে উৎপাদন বৃদ্ধি ঘটিয়েছে। তবে বর্তমানে খাদ্য উৎপাদন যথেষ্ট পরিমাণ বৃদ্ধি পেলেও খাদ্যের গুণগত মান ও খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি বহুলাংশে উপেক্ষিতই রয়ে গেছে। নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়া বত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা সম্ভব নয়। ২০২০ সালের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, খাদ্যে ট্রান্সফ্যাটজনিত হৃদরোগে মৃত্যুর পরিসংখ্যান অনুযায়ী সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ১৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। ২০২৩ সালের মধ্যে ট্রান্সফ্যাট নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সব সদস্য রাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। খাদ্যই যেখানে জীবন ধারণের প্রধান উপাদান হিসেবে কাজ করে সেখানে অনিরাপদ খাদ্যই আবার জীবন্ন বিপন্ন হওয়ার পিছনে নীরব ভূমিকা পালন করে। অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণের ফলে নানা ধরনের স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দেয়। কিডনি, লিভার, রক্তচাপ, রক্তশূন্যতা, ক্যান্সার, জন্ডিস, ডায়াবেটিস, হৃদরোগসহ নানা রকম দুরারোগ্য রোগব্যাধি দেখা দিচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদী অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণে মানবদেহ তিলে তিলে ধ্বংস হচ্ছে। তাই খাদ্য গ্রহণে আমাদের বিশেষ নজর দিতে হবে। পৃথিবীর প্রতিটি দেশেই নিরাপদ খাদ্যকে ভোক্তার অধিকার হিসেবে গণ্য করা হয় এবং এর ব্যত্যয় দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী, শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বাংলাদেশে ২০১৩ সালে নিরাপদ খাদ্য আইন প্রণীত হয়। দেশে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে কাজ করছে জাতীয় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। নিরাপদ খাদ্য গ্রহণ নিশ্চিতকরণে সকলের স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মতে, খাদ্য সংক্রান্ত স্বাস্থ্যবিধির ৫টি মূলনীতি-
১) মানুষ, গৃহপালিত প্রাণী ও কীটপতঙ্গ থেকে রোগজীবাণু খাদ্যে সংক্রমণ
হওয়া প্রতিরোধ করা।
২) কাঁচা ও রান্না করা খাবার আলাদা করে রাখা যাতে রান্না করা খাবারে জীবাণুর সংক্রমণ ন ঘ
৩) পর্যা্ত সময় ধরে ও যথাযথ তাপমাত্রায় খাদ্য রান্না করা যাতে খাদ্যের
রোগজীবাণু ধ্বংস হয়ে যায়।
৪) সঠিক তাপমাত্রায় খাদ্য সংরক্ষণ করা।
৫) নিরাপদ পানি ও নিরাপদ কাঁচামাল ব্যবহার করা। এভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমাদের খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। এই বিষয়ে সরকারের দায়ীত্ব অপরিশিম,তাই বর্তমান সরকারে দায়ীত্ব প্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করছে আপামর জনতা।